![InShot_20230402_113256060](https://banglaexpressonline.com/wp-content/uploads/2023/04/InShot_20230402_113256060.jpg)
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউপির পারের টং গ্রামে প্রায় এক দশক পূর্বে একযোগে কয়েকজন কৃষক করলার চাষের যাত্রা শুরু করে। প্রতিবছরই ভালো ফলনের কারণে গ্রামের অধিকাংশ কৃষক বর্তমানে করলা চাষে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনে ঝুঁকে পড়েছে করলা চাষে।
গ্রামের রাস্তা ধরে প্রবেশ করলেই দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ নজর কাড়বে সবুজের সমারোহে। এলাকাজুড়ে দেখা যায় একের পর এক করলার মাচাং। সবুজ পাতায় ডাকা মাচার নিচেই ঝুলতে দেখা যায় সাড়ি সাড়ি করলার বিছানা। করলা চাষেই এলাকার অনেক কৃষকের পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তেমনিভাবে এলাকার অনেক নারী পুরুষ দিন-মজুর হিসেবেও করোলা খেতে কাজ করে লাভবান হচ্ছেন। এলাকার কৃষক মোঃ নূর ইসলাম, হারুন মিয়া, শফিক মিয়া, মাসুক মিয়া, আমিরুল ইসলামসহ করলা চাষী সবাই অত্যন্ত খুশী এবারের করোলা চাষে বাম্পার ফলনে। তারা করোলা চাষে খুবই আশাবাদী। বিশেষ করে করোলা চাহিদা সম্পন্ন সবজি হিসেবে মূল্যও পাচ্ছেন আশাব্যর্জক।
শ্রীমঙ্গল উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুক মিয়া জানান, এই গ্রামের প্রায় শতাধিক একর জায়গা জুড়ে করোলা চাষ হচ্ছে। করোলা চাষ করে কৃষকরা যেমন সাবলম্বী হয়েছেন তেমনি দৈনিক মজুরি হিসেবে করোলা খেতে কাজ করে স্থানীয় নারী পুরুষরা ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করছেন। লালতীর সীডের টিয়া ও টিয়া সুপার জাতের করোলা চাষ করেই কৃষকরা লাভবান হয়েছেন।
চাষীরা জানান, লাল তীর সীড এর টিয়া জাতের করলা বীজ এনে প্রথম পাড়ের টং গ্রামে বানিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়। এতেই সফলতা মিলে। বাম্পার ফলন দেখে অনেকে করোলা চাষ শুরু করেন। এখন গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই করোলা চাষী। অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন শুধু করোলা চাষ করেই। গ্রামের গৃহিনী আমেনা বেগম বলেন, আমার নিজের জমি নাই। আমি প্রতিদিন অন্যের খেতে কাজ করে ৩শ থেকে ৪শ টাকা মজুরি পাই।
এই করোলাসহ অন্যান্য সবজি বিক্রয়ের জন্য পাড়ের টং এলাকায় খোলা হয়েছে কালেকশন পয়েন্ট বাজার। যেখানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য পাইকাররা করোলা ক্রয় করতে এসে ভীড় জমান। পাড়ের টং কালেকশন পয়েন্ট বাজারের সাধারণ সম্পাদক মো. হামদুল হক বলেন, এখানে আমরা একটা দাম নির্ধারণ করে দেই। পাইকাররা এই দামেই ক্রয় করে নিয়ে যান। তিনি বলেন, প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার কেজি করোলা এই কালেকশন পয়েন্ট থেকে বিক্রি করা হয়। কৃষকরা ৭০ টাকা কেজি দরে করোলা বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে গড় বিক্রয় ৫০ টাকা করে বলে জানান।
লালতীর সীড লিমিটেডের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, এই গ্রামে আগে কৃষকরা ধান, কচু, লতাসহ অন্যান্য সবজি চাষ করতেন। এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারই করোলা চাষের সাথে জড়িত । আমরা এই গ্রামের মানুষের কাছে প্রথমে টিয়া, পরে টিয়া সুপার জাতের করলা চাষ করার পরামর্শ দেই। কৃষকেরা চাষ করে ভালো ফলনে উৎপাদন ও ভালো পেয়েছেন। এমন ফলন হবে আমরা ভাবিও নাই।
তিনি বলেন, করোলার টিয়া ও টিয়া সুপার একটি দিবস নিরপেক্ষ হাইব্রিড জাত। উচ্চতা ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের বীজ। তীব্র শীত ব্যতীত সারাবছর এটি চাষ করা সম্ভব হয়। ফল আকর্ষণীয় সবুজ রঙের ও মধ্যম খাঁজযুক্ত হয়। ফল খেতে মাঝারি তিক্ত নরম ও সুস্বাদু ও হয় বটে। ফল ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ওজন ২৫০-২৮০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। একর প্রতি এর ফলন হয় ১২-১৩ টন। রোপণের ৪২ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফসল উৎপাদন সংগ্রহ শুরু করা যায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন বলেন, করোলা চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর উৎপাদন ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এবছর ৩০ হেক্টরেরও অধিক জমিতে করোলা চাষ হয়েছে। যার ৯০ ভাগই শুধু পারের টং গ্রামে। বিভিন্ন জাতের করোলার চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর করোলার বাম্পার ফলন হয়েছে এবং কৃষকরা ভালো দামও পাচ্ছে। আমরা কৃষকদের মাঝে সার, বীজসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি।
করোলা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় এ বছর যতেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং দূর-দূরান্তের পাইকাররা এসে সরাসরি প্রান্তিক চাষীদের ও স্থানীয় ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে করলা ক্রয় করায় এ অঞ্চলের চাষিদের ভাগ্যের চাকা সচল হয়েছে। একই ধারা অব্যাহত থাকলে করোলা চাষিরা আরও লাভবান হবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।