করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই দেশে নারীদের চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। কেন এত বেশি পুরুষ মারা যাচ্ছেন? নারীরা কেনই-বা সংখ্যায় এত কম আক্রান্ত হচ্ছেন বা মৃত্যুবরণ করছেন? স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এর বিশেষ কোনো কারণ নেই। পুরুষরা বেশি ঘরের বাইরে বের হন এই কারণে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি, মারাও যাচ্ছেন বেশি। পাশাপাশি পুরুষের চেয়ে নারীরা অনেক বেশি সতর্ক।
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, জেনেটিক্যালি নারীদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। অন্য দিকে বয়স্ক মানুষের চেয়ে মাঝ বয়সি মানুষের মৃত্যু বেশি হচ্ছে বাংলাদেশে। যেখানে অন্যান্য দেশে চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। এটাও কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে ৯৮ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ পুরুষ আর ২৯ শতাংশ নারী। অন্য দিকে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩০৫ জনের। এর মধ্যে ৭৭ ভাগই পুরুষ। আর নারী ২৩ ভাগ। অর্থাত্ দেশে আক্রান্তের চেয়ে নারীদের মৃত্যুহারও বেশ কম। সর্বশেষ বুধবার যে ৪৩ জন মারা গেছেন তার মধ্যে ২৮ জন পুরুষ আর নারী ১৫ জন। আগের দিন মঙ্গলবার মারা যান ৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৭ জন, নারী ৬ জন।
তিনি বলেন, পুরুষের বেশি মৃত্যুর কোনো গবেষণা নেই। এটার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণও নেই। তবে স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু পুরুষরা বেশি বাইরে যান সে কারণে তারা বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। পাশাপাশি পুরুষদের তুলনায় নারীরা বাইরে বের হলে অনেক বেশি সতর্ক থাকেন।
কেন পুরুষ বেশি আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণ করছেন? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। তবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, পুরুষদের চেয়ে নারীরা অনেক বেশি সতর্ক। জেনেটিক্যালি কিছু একটা থাকতে পারে। পাশাপাশি পুরুষের চেয়ে নারীরা বাইরে বের হন কম। আবার যে নারীরা বাইরে যাচ্ছেন তারা অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছেন। যেটা অনেক পুরুষ করছেন না। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি।
এদিকে বাংলাদেশে বয়স্ক মানুষের চেয়ে মাঝ বয়সি মানুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। যেখানে অন্যান্য দেশে বয়স্করা মারা যাচ্ছেন বেশি। কেন এমন হচ্ছে? জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) সাবেক পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আব্দুর রহমান বলেন, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই একটা চিন্তার কারণ। আমাদের এখানে যুবক বা তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা কম। তারা কারণে অকারণে বাসার বাইরে যাচ্ছেন। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। ফলে সেখান থেকে তারা সংক্রমিত হচ্ছেন। বেশি সংক্রমণের কারণে মারাও যাচ্ছেন বেশি। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
বাংলাদেশে এত বেশি সংক্রমণের কারণ কি? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে একটি বাসায় অনেক মানুষ বসবাস করেন। অল্প জায়গার মধ্যে বেশি মানুষকে থাকতে হয়। ফলে একজন আক্রান্ত হলেই পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন।
এছাড়া প্রতিটি পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, ডায়াবেটিসের রোগী আছে। ফলে এই ধরনের রোগীরা যখন আক্রান্ত হচ্ছেন তখন তাদের বাঁচানো যাচ্ছে না। তবে আমাদের এখানে বয়স্করা অনেক বেশি সতর্ক। বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। অনেক দেশেই বেশি বয়স্করা মারা যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশ বয়স্কদের মৃত্যু রোধে সফলতা অর্জন করেছে। তবে মাঝ বয়সিরা অবশ্যই চিন্তার কারণ।