রেস্তরাঁ বা রাস্তার খাবার কিংবা ডেলিভারি অ্যাপে আনানো খাবারে ভয় নেই, যদি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়
খুলে গিয়েছে রেস্তরাঁ। তাই বাইরে ভূরিভোজে এখন আর অসুবিধে নেই। গত তিন মাস ধরে বাড়ির খাবার খেয়ে খেয়ে অনেকেরই স্বাদবদলের ইচ্ছে ষোলো আনা। কিন্তু এ দিকে যে মনে ভয়! করোনা আতঙ্ককে বাগে এনে ফুচকা, মোমো, কাটলেটে কামড় বসাতেও তো সাতপাঁচ ভাবতে হচ্ছে। তবে লকডাউনেও অনেকে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ দিয়ে খাবার আনিয়ে খেয়েছেন। কিন্তু একটা প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। বাইরের খাবার খাওয়া এখন কি নিরাপদ? তা থেকে রোগ সংক্রমণের ভয় নেই তো? বাইরের খাবার খেলেও কী বিধিনিষেধ মাথায় রাখা উচিত?
চিকিৎসকের আশ্বাস
ফাস্টফুড খেতে চিকিৎসকেরা সব সময়েই বারণ করেন। করোনার দাপট বাড়ায় মোমো, বার্গার, পিৎজ়া কম খাবেন না কি একেবারেই খাবেন না, সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল জানালেন, ভয় খাবারে নয়। ভয়টা যথাযথ হাইজিন মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে। এখনও অবধি করোনা নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে, তাতে খাবার থেকে সংক্রমণের প্রমাণ মেলেনি। তাই খাবার কী ভাবে তৈরি হচ্ছে, যিনি ডেলিভারি দিতে আসছেন, তিনি কতটা সচেতন… এ সব বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
বাইরে থেকে আনা খাবার (মিষ্টি ছাড়া) সাধারণত ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই খেয়ে ফেলা হয়। বেশি দিন ফ্রিজে রাখা হয় না। তাই সে দিক থেকেও ভয়ের কারণ নেই বলে মত চিকিৎসকদের।
ফুচকা কি খাবেন?
বাইরের আর যে কোনও খাবার নিয়ে এ সময়ে ছুঁতমার্গ না থাকলেও, ফুচকা খাবেন কি না, তা নিয়ে বোধহয় অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে। এ দিকে মাসের পর মাস ফুচকা না খেয়েও মনটা ছটফট করছে। ডা. সুবীর কুমার মণ্ডলের কথায়, ‘‘কেউ যদি এখন সালঁয় গিয়ে চুল কাটানোর সাহস দেখাতে পারেন, তবে ফুচকা খেতেও সমস্যা নেই। কারণ হাত থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় না। হাত স্যানিটাইজ়ড করে, চোখে-মুখে হাত না দিয়ে, হাইজিন মেনে যদি কোনও ফুচকাওয়ালা ফুচকা বানান, তবে তা খেতে অসুবিধে নেই। সালঁয় যে কোনও সার্ভিসের সময়ে অন্য ব্যক্তির চোখ-নাক গ্রাহকের অনেক বেশি কাছাকাছি চলে আসে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সেখানে সংক্রমণের ভয় বেশি।’’ তবে সালঁ হোক বা ফুচকা খাওয়া, সতর্কতা মেনে সবটাই করা যায় বলে আশ্বাস দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ফুচকার তেঁতুল জল অনেকে ভয়ে খেতে চান না। কিন্তু ওই জলের পিএইচ ফ্যাক্টর যা থাকে, তাতে কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া বাঁচতে পারে না।
বিরিয়ানি/রোল/ পিৎজ়া/মোমো কি থাকবে তালিকায়?
এই ধরনের যে কোনও পদ যে তাপমাত্রায় তৈরি হয়, তাতে ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস থাকা সম্ভব নয়। তবে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা কতটা মানা হচ্ছে, সেটাই সবচেয়ে আগে বিবেচ্য। ডেলিভারির ক্ষেত্রে যে পাত্রে করে এই খাবার আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের, ডিসপোজ়েবল। চিকিৎসকদের মতে, পাত্র থেকে যত না ভয়, তার চেয়ে বেশি ভয় হতে পারে ডেলিভারি বয় ও গ্রাহকের কাছাকাছি আসায়। তবে বেশির ভাগ ডেলিভারি অ্যাপই এখন ‘নো-কনট্যাক্ট’ সার্ভিস দিচ্ছে।
রেস্তরাঁর সতর্ক ব্যবস্থাপনা
গত এক সপ্তাহে শহরের একাধিক রেস্তরাঁ খুলেছে। সেখানে মানুষ যে একেবারে যাচ্ছেন না, তা নয়। আবার ভয়ে রেস্তরাঁমুখো হচ্ছেন না এমন মানুষের সংখ্যাটাও কম নয়।
শহরের একাধিক নামী রেস্তরাঁর কর্ণধার শিলাদিত্য চৌধুরী রেস্তরাঁয় যে সব সতর্কবিধি পালন করা হচ্ছে, তার বিশদ বিবরণ দিলেন।
• অতিথিদের হাতের সঙ্গে জুতোও স্যানিটাইজ়ড করা হচ্ছে।
• মেনুকার্ড মোবাইলে পাঠানো হচ্ছে। টেবল ম্যাটেও মেনু প্রিন্টেড থাকছে।
• সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখার জন্য সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টে বদল আনা হয়েছে। ছ’জনের টেবিলে চার জন, চার জনের জায়গায় তিন জন…
• দূরত্ব বজায় রাখার জন্য স্টার্টার থেকে ডিজ়ার্টের অর্ডার এক বারেই নেওয়া হচ্ছে।
• অতিথিরা নিজেরাই খাবার সার্ভ করে নিচ্ছেন।
• ফেলে দেওয়া যায় এমন পাত্রে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।
• খাবার নিয়ে আসছেন যাঁরা, তাঁরা মাস্ক, ফেস শিল্ড আর গ্লাভস পরে কাজ করছেন। দু’-তিনটে টেবিল সার্ভ করার পরেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিশ্রাম দিয়ে, অন্য কর্মীদের কাজে লাগানো হচ্ছে।
• কার্ডে বিল মেটানোর ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সোয়াইপ মেশিন বার বার স্যানিটাইজ়ড করা হচ্ছে।
• এ ছাড়া যাঁরা খাবার তৈরি করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
হোম ডেলিভারি কি নিরাপদ?
শিলাদিত্য জানালেন, তাঁদের চেনের রেস্তরাঁ থেকে হোম ডেলিভারির সময়ে প্যাকেটে হেলথ কার্ড লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে যিনি রান্না করেছেন, যিনি খাবার প্যাক করেছেন ও ডেলিভারি-অ্যাপ বয়ের দেহের তাপমাত্রা লিখে দেওয়া হচ্ছে।
পরিস্থিতির আরও কিছুটা মূল্যায়ন করেই রেস্তরাঁ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে শেফ জয়মাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গত এক মাস ধরে বাড়িতে নিজে রান্না করে প্রি-অর্ডারের ভিত্তিতে তিনি ফুড ডেলিভারির দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রেস্তরাঁয় খেতে আসতে এখনও মানুষের মনে ভয় আছে। আর পরিকাঠামোগত খরচ কমানো না গেলে রেস্তরাঁ খুলে লাভ নেই।’’
জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সমঝোতা করা হয়। বিশেষত, শিশু ও টিনএজারদের ক্ষেত্রে এই বিপদের সম্ভাবনা প্রবল। তাই করোনা আতঙ্কের জন্য নয়, শরীরের ক্ষমতা বুঝেশুনেই এই ধরনের খাবার নির্বাচন করা উচিত।