৬করোনা টেস্টে পজিটিভ হওয়ার পরও গণভবনে গিয়ে হাজির হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র (এসএস ভদ্র)। গত ১৪ আগস্টে জাতির জনকের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, ডেটা কার্ড উন্মোচন ও বিশেষ খামের উদ্বোধনী কাজে গণভবনে যান তিনি। ছবিতে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেবিলে বসে উদ্বোধনী খাম, স্মারক ডাকটিকিট এবং ডেটা কার্ড উন্মোচন কাজে স্বাক্ষর করছেন আর নীল শার্ট পরা সুধাংশু শেখর ভদ্র পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী তখন তার আইসোলেশনে থাকার কথা। সেটা না করে তিনি গণভবনে গিয়েছেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) করা সুধাংশু শেখর ভদ্রের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে তিনি কোভিড পজিটিভ বলে উল্লেখ করা আছে। সেখানে দেখা গেছে, তার নমুনা নেওয়া হয়েছে ১২ আগস্ট, রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে ১৩ আগস্ট। সেখানে তার নাম লেখা রয়েছে এস এস ভদ্র। এই নামেই তিনি পরিচিত বলেও জানা গেছে ডাক বিভাগ সূত্রে।
রিপোর্টের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এ প্রতিবেদক নিজেও সুধাংশু শেখর ভদ্রের রিপোর্টের আইডি নম্বর নিয়ে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করলে সেখান থেকেও তিনি পজিটিভ বলে জানানো হয়।
১৪ আগস্টের ছবিতে দেখা গেছে, সাধারণ একটি সার্জিক্যাল মাস্ক মুখে এবং একটি ক্যাপ মাথায় দিয়ে অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন সুধাংশু। তবে কথা বলার সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখের মাস্কটি ছিল নামানো।
এ বিষয়ে কথা বলতে সুধাংশু শেখর ভদ্রের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল এবং খুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি, তিনি রেসপন্স করেননি। পরে আরেকটি নম্বর থেকে তার পার্সোনাল সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে জসিম নামের একজন কল করেন। ডিজি স্যারকে কেন ফোন করা হচ্ছে জানতে চাইলে সুধাংশু শেখর ভদ্র করোনা পজিটিভ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইইডিসিআরের পাশাপাশি স্যার বেসরকারি আরও দুটি জায়গায় পরীক্ষা করিয়েছেন, সেখানে নেগেটিভ এসেছে।
কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পজিটিভ আসা মানে তাকে পজিটিভই ধরতে হবে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে জানালে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আপনি কি এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন?’ এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি বলে জানালে তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে স্যারকে আমি অবহিত করি, স্যার যদি কথা বলেন তাহলে আপনাকে জানাচ্ছি।’
একাধিক প্রতিষ্ঠানে করোনার নমুনা পরীক্ষা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পজিটিভ আসার পরও কেউ নেগেটিভ ধরে তার স্বাভাবিক কাজ চালাতে পারেন কিনা, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সামনে যেতে পারেন কিনা প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই আইইডিসিআরের রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য।
আইইডিসিআরের রিপোর্ট যদি পজিটিভ হয় এবং অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট যদি নেগেটিভ হয় তাহলে কোনটা ধরা উচিত প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, একটা নমুনার যদি একাধিক পরীক্ষা হয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি একাধিক নেগেটিভ হয়ে কোন একটাতেও যদি পজিটিভ রিপোর্ট হয় তাহলে পজিটিভ রিপোর্টই গ্রহণযোগ্য। সেটা আইইডিসিআর না হলেও, সেটাই ভ্যালিড বলে ধরতে হবে এবং এটাই নিয়ম।