মিস ইউনিভার্স হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে মূল প্রতিযোগিতা থেকে মডেল তানজিয়া জামান মিথিলার নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।
দেশে চলমান লকডাউনে মিথিলার প্রস্তুতির ঘাটতি থাকা, ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শীর্ষক ভিডিওচিত্র নির্মাণ করতে না পারা ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা জটিলতার কারণে বৈশ্বিক এ আসর থেকে মিথিলার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে শফিকুল ইসলাম জানান, এবারের মূল আসরে বাংলাদেশ থেকে কোনও প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে না। প্রস্তুতি ছাড়াই এমন আয়োজনে অংশ নিয়ে বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চান না তারা। মিথিলার একটি ভিডিওচিত্র ও বয়স নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই গত ৯ এপ্রিল মিস ইউনিভার্সের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের প্রতিযোগী হিসেবে তার নাম যুক্ত করেছিল আয়োজকরা; প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে ভোটও চেয়েছিলেন মিথিলা।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোমবার প্রতিযোগিতা থেকে মিথিলার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানান শফিকুল; ইতোমধ্যে মিস ইউনিভার্সের ওয়েবসাইটের প্রতিযোগী বিভাগ থেকে মিথিলার নামও সরিয়ে নিয়েছেন মূল আয়োজকরা।
মিথিলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনেক খারাপ লাগছে। যেতে পারলে অবশ্যই ভালো লাগত। এটাকে ব্যাড লাকও বলতে পারেন। মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের টাইটেলটা তো আমারই। মূল আয়োজনে অংশ
নিতে না পারলেও আমি দেশের জন্য কাজ করব।” প্রায় দশ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ বিজয়ী হয়েছেন মাগুরার মেয়ে মিথিলা; গত ৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে মাথায় বিজয়ীর মুকুট তুলে দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১৬ মে থেকে ৬৯তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার মূল আয়োজন বসছে যুক্তরাষ্ট্রে; প্রতিযোগীদের ৫ মে’র মধ্যে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ভিডিওচিত্র, ব্যক্তিগত কিছু ভিডিওচিত্র ও ন্যাশনাল কস্টিউম বানানোর আবশ্যক হলেও দেশে লকডাউনের কারণে কিছু সম্ভবপর হয়নি বলে জানালেন মিথিলা।
তিনি বলেন, “লকডাউনে আমরা বাংলাদেশের কোথাও যেতে পারিনি। ভিডিওটা বানাতে সিলেট, সুন্দরবন, রাঙামাটি যাওয়া দরকার ছিল কিন্তু সেটা সম্ভবপর হয়নি। পাশাপাশি আমার ব্যক্তিগত কিছু ভিডিও বানিয়ে মিস ইউনিভার্সে জমা দিতে হবে। এগুলো ছাড়া গেলে টপ টোয়েন্টিতেই আসতে পারবে না।”
“প্যান্ডেমিকের মধ্যে আমার ভ্যাকসিনও নেওয়া হয়নি। ভ্যাকসিন ছাড়া আমেরিকাতে ঢুকতে দেবে না। পাশাপাশি ভিসার জটিলতাও আছে। সবকিছু মিলিয়ে যাওয়া হচ্ছে না।”
এতো আয়োজনের পর প্রতিযোগীকে মূল আসরে পাঠাতে না পারায় আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়লেও তা মেনে নিচ্ছেন বলে জানান শফিকুল ইসলাম। “আমরা ভেবেছিলাম, লকডাউনে সরকারি অফিস খোলা থাকলে বিশেষ অনুমতি নিয়ে আমাদের কাজগুলো করতে পারব। কিন্তু সরকারি অফিসই বন্ধ। লকডাউন এতোটা হার্ড হবে সেটা ভাবতেও পারিনি। এত বড় আয়োজন করেও এ বছর মূল আসরে অংশগ্রহণ করতে পারছি না। এখন লোকসানটা মেনে নিতে হবে।”
এর আগে পুরুষদের শৌচাগারে গোপনে ভিডিও ধারণ করে ফেইসবুকেও প্রকাশ করাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন মিথিলা। এক ইন্টারভিউয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘মজার ছলে’ পুরুষদের শৌচাগারে গোপনে ভিডিও ধারণ করে ফেইসবুকেও প্রকাশ করেছিলেন তারা। তাদের এই কাণ্ডকে ‘হয়রানি’ হিসেবে তুলে ধরে ফেইসবুকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন কেউ কেউ। পরে তোপের মুখে ক্ষমা চেয়েছিলেন এ মডেল। পাশাপাশি তার বয়স নিয়েও বিতর্কের খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
মিথিলার নাম প্রত্যাহারে বিতর্কের কোনও ভূমিকা আছে কিনা?
এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল বলেন, “এটার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নাই। এটার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে আয়োজকরা ওয়েবসাইটে ভোটিং প্রসেসই চালু করত না। আমি মেইল করে তার নাম প্রত্যাহার করতে বলার পর তারা মিথিলার ভোটিংটা অফ করেছে।”
মডেল হিসেবে পরিচিত মিথিলা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার আগে ‘রোহিঙ্গা’ নামে বলিউডের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে এসেছেন।
উৎসঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম