রিমন মেহেবুব রোহিত, কক্সবাজারঃ কক্সবাজারে অবৈধ উপায়ে হাঙরের তেল, চামড়া ও কান পাচার চক্র নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন স্থানীয় তিন সংবাদকর্মী। এঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও আরও তিন-চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল রোববার সকালে জেলা শহরের নুনিয়াছড়ায় হাঙরের তেল তৈরির কারখানার ভিডিও চিত্রধারণ ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এঘটনা ঘটে। এ সময় কক্সবাজারের স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যম দি টেরিটোরিয়্যাল নিউজ (টিটিএন) প্রধান প্রতিবেদক আজিম নিহাদ, প্রতিবেদক রাহুল মহাজন ও ক্যামেরাপারসন লোকমান হাকিমের ওপর তেড়ে এসে হামলা চালান পাচার চক্রের মূল হোতা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমগীরের ছোট ভাই মোস্তাক আহমেদ নামে এক ব্যক্তি।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, অভিযুক্ত মোস্তাক হামলার শিকার সাংবাদিক নিহাদের গলা চেপে ধরেন, ক্যামেরা কেড়ে নিতে চড়াও হন ক্যামেরাপারসন লোকমানের ওপর। এ সময় মোস্তাককে অকথ্য ভাষা ও অশোভন আচরণ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে মোস্তাক দম্ভোক্তি করতে বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ কিছু করতে পারেনি, তোরা কি করতে পারবি?’
পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও অন্যান্য সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহাদসহ অন্যদের উদ্ধার করে। পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
সাংবাদিক আজিম নিহাদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের সংশোধিত ৩৯ ধারা অনুযায়ী বিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত হাঙর আহরণ এবং বাজারজাত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইন না মেনে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে অবৈধভাবে হাঙর সংগ্রহ করে একটি প্রভাবশালী চক্র প্রাণীটির বিভিন্ন অংশ এবং বিশেষ কায়দায় উৎপাদিত তেল বিদেশে চড়া মূল্যে পাচার করে আসছিল। ওই চক্রের তথ্য পেয়ে সচিত্র প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছিলেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘হাঙরের তেল তৈরির কারখানা যে এলাকায় অবস্থিত সে এলাকার দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে আমি ও আমার সহকর্মীদের মারধর করে চক্রের প্রধান আলমগীরের ছোট ভাই। আমি মাথায় ও গলায় আঘাত পেয়েছি, চিকিৎসক সিটিস্ক্যান করাতে বলেছেন।’
দায়ের হওয়া মামলা প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় কর্মরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, এজাহার পাওয়া মাত্রই আমরা মামলা নথিভুক্ত করেছি। কক্সবাজার থানায় মামলা নম্বর ১১/৮-০৫-২২। আসামিদের আইন আওতায় আনতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অভিযুক্তদের বিচার দাবিতে সোমবার বিকেল ৩টায় কক্সবাজার পৌরসভার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজার, সাংবাদিক সংসদ, জাতীয় খেলাঘর আসরসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।