রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়েও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এখনও নমুনা দেওয়ার বিষয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করছে। লোকলজ্জায়ও কেউ কেউ সংক্রমণ বা উপসর্গ আড়াল করতে চাচ্ছেন। এমনটাই জানিয়েছেন লকডাউন এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মানুষের মাঝে ভীতি দূর করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা করা হচ্ছে। এলাকাজুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। বাসায় বাসায় ডাক্তার গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। এর পরেও মানুষ স্বেচ্ছায় নমুনা দিতে তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আর এ কারণেই ওই এলাকায় রোগী শনাক্ত করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি স্থানীয়রাও আতঙ্কে রয়েছেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত ৪ জুলাই থেকে ২১ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয় ওয়ারী এলাকাকে। এরই মধ্যে লকডাউনের ১৪তম দিন অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই এলাকা থেকে সংক্রমণ কমানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। গত দুই দিন থেকে এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতাধিক কর্মীর সমন্বয়ে গঠিত টিম বাসায় গিয়ে রোগীর খোঁজ নিচ্ছেন। যাদের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তাদের নমুনা দিতে বলা হচ্ছে। এর পরেও মানুষ আগ্রহী হচ্ছে না।
ওয়ারীর নমুনা সংগ্রহ বুথের দায়িত্বে আছেন ডিএসসিসি অঞ্চল-৫-এর সমাজকল্যাণ শাখার তত্ত্বাবধায়ক নুরুল ইসলাম খান নাঈম। নমুনা দেওয়ার বিষয়ে ওই এলাকার বাসিন্দাদের আগ্রহ না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গতকাল ও আজ বাসায় বাসায় গিয়ে করোনা উপসর্গ আছে কিনা তা দেখার চেষ্টা করছি। আগামী দিনগুলোতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কিন্তু কেউ নমুনা দিতে না চাইলে তো আমরা জোর করে নিতে পারি না। যারা ব্যুথে গিয়ে নমুনা দিতে পারছেন না বা যারা অক্ষম তাদের কাছ থেকে বাসায় গিয়ে নমুনা নেওয়া হচ্ছে। আরা যারা সক্ষম তাদের ব্যুথে গিয়ে নমুনা দিতে বলা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. রাজন পাতিলের পরামর্শে আইইডিসিআরের ২৮ জন এবং আমাদের ৮০ জন ডাক্তার ও কর্মী বাসায় বাসায় গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ডাক্তাররা রোগীদের ফোন করে খোঁজখবর জানার চেষ্টা করছেন। তারা কোথাও কোনও উপসর্গযুক্ত ব্যক্তি আছে কিনা তা খুঁজছেন। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষ অনেক সময় আমাদের ফোনও ধরতে চাচ্ছে না। মানুষের মাঝে ভয় দূর করতে যারা করোনায় আক্রান্ত তাদের বাসায় আগামীকাল থেকে মেয়রের পক্ষ থেকে ভিটামিন-সি যুক্ত ফলের ঝুঁড়ি বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে।’
ওয়ারীর করোনা সংগ্রহ ব্যুথের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত এলাকায় ২০৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৮০ জনের নমুনার ফল পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ৮০ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। লকডাউনের প্রথম দিন (৪ জুলাই) ১৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাত জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় দিন (৫ জুলাই) ১৯ জনে ১০ জন; তৃতীয় দিন (৬ জুলাই) ১৬ জনে ৭ জন; চতুর্থ দিন (৭ জুলাই) ১৮ জনে ৭ জন; পঞ্চম দিন (৮ জুলাই) ২৬ জনে ১২ জন; ষষ্ঠ দিন (৯ জুলাই) ১০ জনে ৫ জন; সপ্তম দিন (১০ জুলাই) ১৫ জনে ৩ জন; অষ্টম দিন (১১ জুলাই) ১৪ জনে ৩ জন; নবম দিন (১২ জুলাই) ১৩ জনে ১২ জন; দশম দিন (১৩ জুলাই) ১০ জনে ৪ জন; একাদশ দিন (১৪ জুলাই) ৯ জনে একজন; দ্বাদশ দিন (১৫ জুলাই) ১৫ জনে ৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ত্রয়োদশ দিন ১৬ জুলাই ১৩ জন ও চতুর্দশ দিন (১৭ জুলাই) ১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এখনও তাদের ফলাফল পাওয়া যায়নি।