আগামী জুনে এসএসসি ও সমমান এবং জুলাই-আগস্টে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পরীক্ষা নেবে না সরকার। শিগগিরই পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে গতবারের মতো অটো পাস দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত তারা পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে তবে সবকিছু নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।
সূত্র জানায়, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সম্পন্ন করেই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়ার প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসার কারণে বছরের শেষ দিকে হলেও দুইটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কথা ছিল গত ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে পরবর্তী দুই সপ্তাহ পর এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসএসসি ও সমমানের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ৮৪ দিনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে হবে। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে দুই পরীক্ষাই নেওয়া হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত বছরের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো হয় আগামী ২২ মে পর্যন্ত।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘চলতি বছরের জুন মাসে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে এটা আগে বলেছিলাম। এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। যখনই স্কুল কলেজ খোলা হবে তখন থেকে এসএসসির ক্ষেত্রে ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসির ক্ষেত্রে ৮৪ কর্মদিবস সরাসরি ক্লাস নেওয়ার পর আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষা জুলাইয়ে চলে যেতে পারে।
বিদ্যমান ছুটির ঘোষণা অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আগামী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিনের সিলেবাস শেষ সময় যাবে আগামী ২৩ জুলাই। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হলেও আগস্ট মাসে পরীক্ষা নিতে হবে। একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে যাবে।
কিন্তু এরই মধ্যে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এর বিস্তার রোধে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সদস্য অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমার মনে হয় আগামী তিন মাসের আগে হয়তো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে না।
সেক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে বছরের শেষে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হতে পারে। করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসলে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব না মানা গেলে এর করোনার বিস্তার বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এদিকে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য প্রশ্নপত্র ছাপাসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণের কেউ বাকি থাকলে লকডাউনের পর তা সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু এতসব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও এ বছর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ছাপাসহ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই পরীক্ষা নেওয়া হবে।
করোনা পরিস্থিতি শিগগিরই অনুকূলে না এলে কবে নাগাদ পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘প্রয়োজনে বছরের শেষে পরীক্ষা নেওয়া হবে। ’
গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার মতো মূল্যায়নের ভিত্তিতে ফলাফল দেওয়ার কোনও চিন্তা-ভাবনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে। আর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হলে তার এক বা দেড় মাস পর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।
উল্লেখ্য, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা বড়িয়ে আগামী ২২ মে পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়।