
কুয়েতে আটক লক্ষীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে ৮ দিনের রিমান্ড শেষে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
অর্থপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন কুয়েতে আটক হন এই সংসদ সদস্য। এরপর থেকেই বিষয়টি বেশ জোরেশোরে তদন্তে নামে কুয়েত সরকার। এরইমধ্যে পাপুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টানা ৮ দিনের রিমান্ডে নেয় কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন বিভাগ।
আরব টাইমসের খবরে বলা হয়, কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন মঙ্গলবার বাংলাদেশের এই এমপিকে ডিটেনশনে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে রিমান্ডে নিয়ে কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে কুয়েতের বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান এমপিকেকে ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের এমপি পাপুল।
এছাড়া এমপি পাপুল ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করেছেন বলেও কুয়েতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রমাণ পেয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটগুলোর বিরুদ্ধে কুয়েত সরকার সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। ধরপাকড় শুরু হলে নতুন একটি কোম্পানির নাম আলোচনায় চলে আসে। ওই কোম্পানি ১০ হাজার কর্মী কুয়েতে নিয়ে তাদের কাছ থেকে দুই কোটি দিনার আদায় করেছে।
ওই সময় সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলর নামে কুয়েতে মানবপাচারে হাজার কোটি টাকার কারবারের অভিযোগ উঠে। তাকে নিয়ে কুয়েতের গণমাধ্যমগুলো রিপোর্টও প্রকাশ করেন।
তবে দেশটিতে গ্রেফতার অভিযান শুরুর আগেই এমপি শহীদ দেশে চলে আসেন বলে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়।
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী একটি অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে প্রবাসী ও বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে যেতে প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই হাজার ও আবাসিক খরচ ৫০০ কুয়েতি দিনার আদায় করা হয়।
গোয়েন্দাদের প্রকাশ করা প্রাথমিক প্রতিবেদন জানায়, ওই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধি ও দালাল রয়েছে। তিনি সবার কাছে কমিশন বণ্টন করে দেন। আর লাভের বড় অংশটি যায় কোম্পানির মালিকের কাছে। গত দুই বছরে এভাবে তিনি বিশাল অঙ্কের অর্থের মালিক হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবপাচারের বিরুদ্ধে কুয়েতের সিআইডির অভিযানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এক সপ্তাহ আগে এমপি কুয়েত ছেড়ে যান। কুয়েতে তার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ মাস ধরে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে না।
ওই সময় আরব টাইমসের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতে জনশক্তি রফতানির জন্য সরকারি কার্যাদেশ পেতে ঘুষ হিসেবে সেখানকার সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি দিয়েছেন এমপি শহীদ। তার সম্পদের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে সেখানকার এক নাগরিকের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে ব্যবসা শুরু করেছেন।
জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির সমঝোতার মাধ্যমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পাপুল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। পরে এক পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির প্রার্থী। আলোচনা ছিল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পাপুল ওই প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন। বিষয়টি নির্বাচনের সময়ই বেশ আলোচিত ছিল।