কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের উলিপুরে পিতার বিরুদ্ধে কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার চেষ্টার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রেসক্লাব উলিপুর এর হলরুমে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনে উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের পন্ডিতপাড়া গ্রামের আসাদুজ্জামান মঞ্জুর কন্যা মমতাজ বেগম (৩৬) অভিযোগ করে বলেন, তার পিতা কয়েক বছর আগে মা রুবিনা বেগম (৫৫) কে মৌখিক ভাবে তালাক দিয়ে অন্যত্র আবার বিয়ে করেন। এরপর প্রথম স্ত্রী রুবিনা বেগম, কন্যা মমতাজ বেগম ও নাতনি নুসরাত জাহান (১২) কে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ ঘটনার পর মমতাজ বেগম পাশেই আলাদা জায়গা ক্রয় করে মা-মেয়ে ও স্বামীসহ বসবাস করে আসছিলেন। পরবর্তীতে কাজের সন্ধানে মমতাজ বেগম স্বামী-সন্তানসহ ঢাকায় চলে যান।
এরপর গত ঈদুল আযাহার সময় মমতাজ বেগম পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে ঈদ করার জন্য বাড়িতে আসেন। ঈদের দিন (১ আগষ্ট/২০ইং) রাতে পিতা আসাদুজ্জামান মঞ্জুর নেতৃত্বে এরশাদুল হক, এমদাদুল হকসহ কয়েকজন অপরিচিত লোক মমতাজ বেগমের বাড়িতে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করতে থাকে। এ সময় তাদের বাঁধা দিতে গেলে হামলাকারীরা মমতাজ বেগম, স্বামী হাছিনুর রহমানকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করেন। তাদেরকে রক্ষার জন্য মমতাজ বেগমের মা রুবিনা বেগম এগিয়ে এলে তাকেও কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয়।
মমতাজ বেগম সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ওই সময় ৯৯৯ এ ফোন করলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান এবং ঘটনাস্থল থেকে এরশাদুল হক নামের একজনকে আটক করেন। পরবর্তীতে আমার মা রুবিনা বেগমের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
ওই হামলায় আমার মাথায় ১৭টি সেলাই, স্বামী হাছিনুর রহমানের মাথায় ১১টি সেলাই ও আমার মায়ের মাথায় ও কানে ২০টি সেলাই দেয়া হয়। আমরা গুরুত্বর অসুস্থ্য থাকায় ঘটনার পরদিন আমার নাবালিকা কন্যা নুসরাত জাহানের মাধ্যমে উলিপুর থানায় মামলা দায়ের করি (মামলা নং-১, তারিখ-০২/০৮/২০ইং)। এ মামলায় আমার পিতা আসাদুজ্জামান মঞ্জু আদালতে জামিন নিতে গেলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করেন।
সম্মেলনে মমতাজ বেগম দাবী করেন, মামলা তুলে নেয়ার জন্য এজাহারভূক্ত আসামীরা আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন। আমার সাথে জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয়ে অন্য একটি মামলার আসামী স্থানীয় ধান্দাবাজ ও টাউট মাহমুদুর রহমান শাহীন গত ২০ সেপ্টেম্বর এলাকার কিছু লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে ধরনীবাড়ী লতিফ রাজিয়া মাদ্রাসার সামনে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করান। সেখানে আমার পিতার পরিচয় গোপন করে আমাকে প্রতিবেশি ও বে-পারোয়া নারী আখ্যা দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি প্রদান করা হয়।
তিনি আরও দাবী করে বলেন, আমার ক্রয়কৃত ও আমার মায়ের মোট ৩৬ শতক জমির মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৪ শতক জমি আমাদের দখলে রয়েছে যা বসতভিটা। বাকী জমি তারা দখল করে নিয়েছে। মূলত পরিবারের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা ও আমাদেরকে এলাকা ছাড়া করার জন্য আমার পিতা পরিকল্পিত ভাবে এ হামলা চালিয়েছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষনসহ ন্যায় বিচার দাবী করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মমতাজ বেগমের মা রুবিনা বেগম, কন্যা নুসরাত জাহান প্রমুখ।