মো. রাসেল ইসলাম, যশোর জেলা প্রতিনিধি: শার্শার নাভারণ হতে গোড়পাড়া সড়কের পৃথক দুটি স্থানে বেতনা নদীর উপর একই রকম দুটি ব্রিজ নির্মাণের কাজে ধীর গতি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ব্রিজ দুটি এখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্মাণাধীন দুটি ব্রিজের পাশেই সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য তৈরি উন্মুক্ত কাঠের সেতু দিয়ে চলাচলে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে। কাঠের সেতু দুটিতে ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল সহ অন্যান্য যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়ে সেতু থেকে ছিটকে নিচে পড়ে মারাত্মক ভাবে আহত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
গত কয়েক দিনের মধ্যে উন্মুক্ত এই কাঠের সেতু পারাপারের সময় ভ্যান, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল নিচে পড়ে একই পরিবারের তিন জনসহ বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ শিশুসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
যার মধ্যে নাসরিন খাতুন (৩৫) নামে এক নারীর অবস্থা আশংকাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই নারী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সে গোড়পাড়া গ্রামের আলী কদরের মেয়ে। এসময় আহত হয় ইরিন খাতুন (১৮) ও প্রান্ত (০৯) নামে অপর এক শিশু।
আহত নাসরিন খাতুনের নিকট আত্মীয় বলিদাদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই ব্রিজের কাজ নিয়ে ব্যাপক টালবাহানা শুরু করেছে। ব্রিজ তৈরিতে তাদের কোন গতি নেই।
বর্ষা মৌসুম চলে আসলেও মানুষের ভোগান্তির বিষয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশেই কাঠের সেতুটি জরাজীর্ণ ও উন্মুক্ত। সেতুটির দুই ধারে সাপর্ট হিসাবে কোন রেলিং নাই। ফলে এই কাঠের সেতু দিয়ে পারাপারের সময় সাধারণ মানুষ দূর্ঘটনার কবলে পড়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
যতদিন ব্রিজের কাজ শেষ না হয় ততদিন যেন সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে চলাচল করতে পারে তারজন্য উন্মুক্ত কাঠের সেতুটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহ উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক জামিরুল ইসলাম বলেন, কাঠের সেতু দিয়ে চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায়ই ছোট বড় যানবাহন গুলো যাত্রী নিয়ে নিচে পড়ে মারাত্মক ভাবে আহত হচ্ছেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দিচ্ছি। কাঠের সেতু সহ নির্মাণাধীন ব্রিজটির কাজ দ্রুত শেষ করা একান্ত প্রয়োজন।
গাতিপাড়া গ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান সর্দার বলেন, ব্রিজ তৈরিতে যে পরিমাণ ধীরগতি দেখছি তাতে মনে হচ্ছে সময়ের পার হলেও কাজ শেষ হবেনা। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে।
এখন প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ পড়ে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। নিচে চলাচলে অসুবিধা হওয়ায় উন্মুক্ত কাঠের সেতু দিয়ে পারাপারের হার বেড়ে গেছে। কতৃপক্ষের কাছে বিনীত ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যেন নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখেন।
এত দূর্ভোগের পরেও গেল ঈদের আগে থেকেই ছুটি কাটাচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্রিজ নির্মাণের সর্বশেষ তথ্য জানতে কন্ট্রাকটর তৌফিকুল এর ০১৯১৬-১৩৭৮০৫ নাম্বারে একাধিকবার রিং দিলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) এম এম মামুন হাসান জানান, প্রতিনিয়ত পড়ে গিয়ে মানুষের যে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা শুণেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে পাশাপাশি কাঠের সেতুটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
গত বছরের ৯ জানুয়ারি ২০২২ এ কাজ শুরু হয়ে আগামী ৩ জুলাই ২০২৩ এ শেষ করার তারিখ নির্ধারণ করেছে যশোরের আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
দীর্ঘদিনের পুরাতন ও ঝুকিপূর্ণ ব্রিজ ভেঙে ৬০ মিটার লম্বা ব্রিজ দুটি তৈরি করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগ (এলজিইডি)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি একই সাথে দুটি ব্রিজের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও ব্রিজের নির্মাণ কাজ কচ্ছপ গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে বলে সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়।
ব্রিজ নির্মাণের কাজ এক বছর পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন কার্য্যজটিলতায় দুটি ব্রিজের কাজ সব মিলিয়ে ৬০ ও ৪০ শতাংশ হয়েছে।