বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসী অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের সিংসহাসন টলমল করছে। তাদের পতন অত্যাসন্ন। কেউ ঠেকাতে পারবেন। এখন নতুন করে গুম পরিবারের কাছ থেকে ‘মিথ্যা বিবৃতিতে সই করিয়ে সরকার বিশ্ব বিবেককে বিভ্রান্ত করার চক্রান্ত করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী টিভিতে কথায় কথায় চোখের পানি ফেলেন। আসলে সেটা হচ্ছে তার মায়া কান্না বা টিয়ার্স অব ক্রোকোডাইল। অন্যের কষ্টে তিনি অশ্রু ঝরাননা। আসলে তার ওপর ভর করছে ইয়াহিয়া ও টিক্কা খানের আত্মা। তা না হলে তিনি অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলামকে গ্রেফতার করতেন না। ১৪ ডিসেম্বর আমরা বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি। আগামীতে আমরা ১৪ ডিসেম্বর ‘বুদ্ধিজীবী নির্যাতন দিবস’ পালন করবো।
রোববার, জানুয়ারি ১৬, ২০২২, দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইউনির্ভাসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলামের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, এখন যে পরিবারগুলোর গুম হয়েছে তাদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ পাঠাচ্ছেন, নিজেরা স্টেটমেন্ট লিখেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্টেটমেন্ট লিখে বলছে যে, এখানে সই করো? এটা কী? বলা হচ্ছে যে, আমার ছেলে বা আমার স্বামী সে নিজে নিজেই হারিয়ে গেছে। পুলিশ লিখে নিয়ে যাচ্ছে আর ওখানে (স্টেটমেন্টে) সই করতে বলছে পরিবারকে। পুলিশের হুমকির মুখে কজন টিকবে? অনেকে প্রতিবাদ করেছে যে, না আমরা জানি, কিভাবে তাদেরকে গুম করা হয়েছে। এখন এই ধরনের একটি প্রচেষ্টা সরকার নিয়েছেন যাতে বিশ্বকে দেখানো যায় যাতে যারা গুম হয়েছে তারা নিজে নিজে হারিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আসলে তো কোনো কিছু আটকিয়ে রাখা যায় না। আটকিয়ে রাখায় যায় না বলেই বিএনপি ব্যস্ত থাক তাজমেরী এস এ ইসলামকে নিয়ে, বিএনপি ব্যস্ত থাক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে। আর ফাঁক দিয়ে আমরা (সরকার) এই কাজগুলো করি। কারণ চারিদিকে আজকে ধিক্কার উঠেছে, চারিদিকে আজকে সমালোচনা ঝড় বইছে। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। পতন যখন অত্যাসন্ন হয় সেই পতনকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। আপনি যত বাঁশ দিয়ে, কাঠ দিয়ে, লোহার রড দিয়ে আপনার সিংহাসনকে ঠেক দেয়ার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। আপনার সিংহাসন আর শক্ত থাকবে না। ওটা এখন টলমল করা শুরু হয়েছে, তার লাস্ট পেরেকটা আপনি নিজেই মেরেছেন আপনার কফিনে, আপনার সরকারের কফিনে তাজমেরী ইসলামের মতো একজন শিক্ষাবিদকে কারাগারে পাঠিয়ে। এতে আমরা বিচলতি নই। বরং আমরা উজ্জীবীত। অধ্যাপক তাজমেরির নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে ফরাসীর দস্তয়ভস্কির ও আমাদের জাতীয় এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো। অন্যদিকে সরকার প্রধানের নাম লেখা থাকবে হালাকু খানের মতো।
সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছেন, ফয়সালা হবে রাজপথে। এই ফয়সালা গণতন্ত্রের ফয়াসালা, এই ফয়সালা গণতন্ত্রের জয়যাত্রার ফয়সালা, এই জয়যাত্রা অত্যাসন্ন। আপনার ফ্যাসিবাদী, আপনার নাতসীবাদের দুষিত মিশ্রণ বাংলাদেশ থেকে আপনার সরকার নিঃশেষ হয়ে যাবেন।
রিজভী বলেন, এই প্রতিবাদী মানববন্ধন থেকে আমি তার এই মুহুর্তে মুক্তি দাবি করছি। তাকে মুক্তি দিন। অন্যথায় এইটাই অগ্নি স্ফুলিঙ্গের মতো আন্দোলনের এমন দাবানল তৈরি হবে সেই দাবানলে প্রধানমন্ত্রী আপনার র্যাব, আপনার পুলিশ, আপনাকে যারা পাহারা দেয়। কেউ আর আপনাকে পাহারা দেবে না। আপনার পতন অবশ্যম্ভাবী হবেই।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইউনির্ভাসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলামের মুক্তির দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদাদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো: আনিসুর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক একেএম মতিনুর রহমান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমজাদ হোসেন, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক ডা. আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, ডক্টরস অ্যসোসিয়েশনের (ড্যাব) অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, শামীমুর রহমান শামীম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, রাকিবুল ইসলাম ইসলাম, আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুস সালাম, মো: আল-আমিন, অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো: নূরুল ইসলাম, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খান মো: মনোয়ারুল ইসলাম, অধ্যাপক তানভীর আহসান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. বেলাল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রকৌশলী মাহবুব আলম, কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু, নোয়খালী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সাইফুল ইসলাম, এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।