বিএনপির আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা দেখে আওয়ামী লীগের কোমর ভেঙ্গে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাই তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকতে হচ্ছে।
বিএনপি হাঁটুভাঙ্গা বলে লাঠির ওপর ভর করেছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের জবাবে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক ছাত্র সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে বিএনপির নাকি হাঁটুভাঙ্গা। আমাদের যে হাঁটু ভাঙ্গেনি, এটা তো টের পাচ্ছেন। লাঠিও আমরা নেইনি। আসলে ইতোমধ্যে তাদের কোমরই ভেঙ্গে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু লাঠি নয়, ইতোমধ্যে রাম দা, তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপর ভর করে হাঁটছে। এরা জনগণের সাথে নেই, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেজন্য আজকে তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকতে হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই একটা সন্ত্রাসী দল। সেজন্য একদিকে তারা বলে, আমার সোনার ছেলেদের হাতে আমি কলম তুলে দিয়েছি। অন্যদিকে তারা সোনার ছেলেদের হাতে বন্দুক-পিস্তল-লাঠিসোঁটা সব কিছু দিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ২২ আগস্ট থেকে জনগণের দাবি নিয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। সেই আন্দোলনে যখন জেগে উঠছে মানুষ, তখন তারা একে দমন করার জন্য সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। তারা পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করেছে, অথচ খুন করে তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে ২৫ হাজারের উপরে নেতা-কর্মীদের আসামি বানিয়েছে, ৩ হাজারের মতো আমাদের ছেলেদের আহত করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। কারণ তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে, মিছিলে, ছাত্রদলের একেবারে একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা লাঠি, বন্দুক এবং টিয়ার গ্যাস নিয়ে আক্রমণ শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ অত্যাচার চালাচ্ছে, গুম করছে, মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে। কিন্তু আজকে জনগণের উত্তাল তরঙ্গ শুরু হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এবারে যে পরিবর্তন হবে তা আমার ছাত্রদলের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে হবে, দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব একটাই- দেশের সকল ছাত্রসমাজকে, তরুণ-যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ করে একটা দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পদত্যাগের বাধ্য করতে হবে। এটাই হবে প্রকৃত জবাব।’
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখনো সময় আছে উল্টো-পাল্টা কথা না বলে পদত্যাগ করুন শান্তিতে। সেইভ এক্সিট নেন এবং একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন।’
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। তাদের অনেকের হাতে জাতীয় পতাকা দেখা গেলেও কোনো লাঠি তাদের হাতে দেখা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহত নেতারাও মঞ্চে এসে নেতা-কর্মীদের সালাম দিয়ে চলে যান।
সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা লাঠি নিয়ে কোনো মিটিংয়ে যাই না, যেতেও চাই না। কিন্তু আপনারা ঘোষণা দেবেন লাঠি নিয়ে মিছিল করা যাবে না। আপনারা লাঠি দিয়ে পেটাবেন এটা ভালো কথা হলো না, এটা সঠিক কথা হলো না। আপনারা দেখিয়েছেন লাঠিপেটা করে কিভাবে মানুষ হত্যা করতে হয় ১/১১ সময়ে। ১/১১ পূর্ববর্তীতে যে নরককাণ্ড ঘটিয়েছেন, যে নারকীয় কাণ্ড ঘটিয়েছেন তা কখনোই দেশের মানুষ ভুলবে না।’
ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, এস এম জিলানী, মোনায়েম মুন্না, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান, রাকিবুল ইসলাম ও আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।