আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সর্বগ্রাসী আগ্রাসন চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, আজকে এই সরকারের আগ্রাসনটা সর্বগ্রাসী। একদিকে আমাদের ইতিহাস বিকৃতি করছে, আরেকদিকে আমাদের অর্থনীতিকে পুরোপুরিভাবে ধবংস করে দিয়ে পরনির্ভরশীল করে ফেলছে। অন্যদিকে রাজনীতিকে পুরোপুরিভাবে একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে গিয়ে আমাদের যে মূল গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা তার থেকে একেবারে সরিয়ে দিয়ে পুরো একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের দিকে চলে যাচ্ছে। এই সরকার এগুলো পরিকল্পিতভাবে করছে।
আজ বুধবার (২৭ এপ্রিল), দুপরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
শেরে বাংলা জাতীয় যুব স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শেরে বাংলা একেএম ফজলুল হকের ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আজকের প্রেক্ষাপটে শেরে বাংলার প্রাসঙ্গিতকতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নিজেরা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আজকে সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করে দিয়েছে সরকার। আপনারা দেখছেন যে, পুলিশ কিছুদিন ধরে যে কাজটা করছে। এই যে ঢাকা কলেজ এবং নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে সংঘর্ষ হলো, দুইজন প্রাণ দিলেন। এটাতে পুলিশ প্রথমে কি করলো? বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের অ্যারেস্ট করে একজনকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠালো। অথচ প্রত্যেকটি মিডিয়ায় তাদের সমস্ত ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, এর জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যারা অস্ত্র হাতে নিয়ে আক্রমণ করেছে এবং ওই দুজনকে হত্যা করেছে। আরেকবার দেখুন ওই পাশেই কলা বাগানে যে পার্ক দখল, বাচ্চাদের যে ফুটবল খেলার মাঠ সেই মাঠ দখল সেখানে থানা বানাচ্ছে।
এরকম অসংখ্য ঘটনা। আজকে বাংলাদেশে মানুষের কোনো রকমের নিরাপত্তা তো দূরের কথা, কি করে তাদের আরো বেশি করে হয়রানি করা যায় সেই ঘটনাগুলো চলছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকে ধবংস করা হচ্ছে, বিরোধী রাজনীতিকে ধবংস করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একসাথে ছয়টা জায়গায় বোমা মারা মামলা আছে। এই যে মিথ্যাচার, এই যে ভয়াবহভাবে পুরো রাজনীতিকে বিনষ্ট করে দেয়া -এটা আওয়ামী লীগ শুরু করেছে। আমরা সেই কারণে সবসময় বলি- আওয়ামী লীগ প্রকৃত পক্ষে জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সেজন্য আজকে শেরে বাংলা একেএম ফজলুল হক আমাদের কাছে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। আমরা যদি আমাদের মূল জায়গাটা আমরা বুঝি, আমাদের মূল অস্তিত্ব রক্ষা রক্ষার করার জন্য কাজ করতে পারি তা হলে আমরা অবশ্যই সেই জায়গা সফল হওয়ার চেষ্টা করতে পারবো।
শেরে বাংলা একেএম ফজলুল হকের বর্ণাঢ্য জীবনী তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে আমরা শেরে বাংলা ফজলুল হককে একেবারেই ভুলতে বসেছি। আমাদের পাঠ্যপুস্তক বাদ দিন, অন্যান্য যে বই পত্র রচনা হয় সেখানেও তার প্রাসঙ্গিকতা সেভাবে আসে না।
আমরা যখন দেখি, স্মৃতি সংসদগুলো আলোচনা করে সেখানে শেরে বাংলার উপরে গবেষণার কাজ করেছেন এই ধরনের মানুষ কিন্তু আমরা আসতে দেখি না, কথা বলতে শুনি না। এটা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে যে একটা মাত্র পরিবার, একটি মাত্র দর্শন তাকেই সামনে নিয়ে আসার জন্যে তাকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য আজকে সমস্ত বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। আজকে পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে কিন্তু একজন নেতা ছাড়া কারো কোনো নাম গন্ধ নেই। আমাদের ছোট ছোট নাতি-নাতনি যারা স্কুলে পড়াশুনা করে সেখানে কিন্তু তারা একজনের নাম জানে, অন্য কারো নাম জানে না। এমনকি আপনার কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছে তারাও বোধহয় কিন্তু শেরে বাংলার নাম একেবারে ভুলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। কেউ কি জানে শেরে বাংলা ফজলুল হক সাহেবের কবর এখান (জাতীয় প্রেসক্লাব) থেকে খুব কাছে সোহরাওয়ার্দি উদ্যোনে? এখানে তিন জনের কবর আছে তার মধ্যে শেরে বাংলা সাহেবের কবরও আছে।
সংগঠনের সভাপতি আখতারুল আলম খানের সভাপতিত্বে ও সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মহানগর দক্ষিণের সদস্য ইশরাক হোসেন এবং শেরে বাংলার নাতনী ফাহসিনা হক লীরা বক্তব্য রাখেন।