বরিশালের হিজলা উপজেলার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের (কুঞ্জপট্টি গুচ্ছগ্রাম) ঘরের মালামাল বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) শংকর চন্দ্র মালাকার উপজেলার আলীগঞ্জ বাজারে ৫ লাখ টাকার মালামাল মাত্র ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
যদিও তিনি বাদী করেছেন, আশ্রয়ণের ঘরগুলোর মধ্যে ৭টি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশের সরিয়ে আনা হয়েছে। আর এই আনতে লেবার ও ট্রলার ভাড়া মিটাতে তিনি এই মালামাল বিক্রি করেছেন। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, আলীগঞ্জ বাজারের কুয়েতি মার্কেটে পড়ে আছে আশ্রয়ণের টিন, কাঠ, খুঁটি। একটু দূরে আলীগঞ্জ মাদ্রাসার সামনে পড়ে আছে বেশ কিছু আশ্রয়ণের সিমেন্টের খুঁটি। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এই খুঁটি, টিন, রুয়া, বাঘা, ইট কুঞ্জপট্টি থেকে নিয়ে আসেন স্থানীয় ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র মালাকার। বাজারে এনে পানির দরে বিক্রি করেন তিনি।
কুঞ্জপট্টি আশ্রয়ণের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার, নজরুল ইসলাম, হাবিব নকতি, মহিউদ্দিন, বাবুল সরদার, মোজাম্মেল ব্যাপারীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, তহসিলদার শংকর মালাকার এবং স্থানীয় সুমন চৌধুরী, রামপ্রাসাদ, নিমাই মালাকার, সমির মালাকার আমাদের ব্যারাক ভেঙ্গে তহসিল অফিসে নিয়ে যান। পরে শুনি সে গুলো বিক্রি করে অন্যত্র।রামপ্রসাদ, নিমাই মালাকার, সমির মালাকার জানান, তহসিলদার নিজে এ মালগুলো তাদের কাছে বিক্রি করেন। আর আমরা তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেই।
স্থানীয় শাহজাহান সরদার জানান, তিনি বেশকিছু রুয়া, বাঘা ক্রয় করেন তহসিলদারের কাছ থেকে। বেধ অবৈধ জানা নেই। টাকা দিয়ে কিনেছি। সিরাজ কসমেটিক নামের এক দোকানদার জানান, কুঞ্জপট্টি থেকে এখানে এনে টিন, কাঠ বিক্রি করল তখন কেউ কোনো প্রতিবাদ করল না। আমরাতো টাকা দিয়ে এগুলো তহসিলদারের কাছ থেকে ক্রয় করেছি। আমাদের কি অপরাধ। স্থানীয় দুলখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মকবুল আহম্মেদ জানান, সরকারের লোক সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করছেন। সেখানে আমার বাঁধা দেয়ার প্রয়োজন কিসের। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তো তাকে কিছু বলেনি। আমরা কেন বলবো। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ রফিক জানান, এ মালামাল তহসিলদার এনেছেন। তিনিই স্থানীয়দের মাঝে বিক্রি করেন। আমি বাঁধা দেই কি ভাবে।
ধুলখোলা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শংকর মালাকার জানান, তিনি কোনো আশ্রয়ণের মালামাল বিক্রি করেননি। ওইগুলো স্থানীয় সুমন চৌধুরী, রামপ্রাসাদ, নিমাই মালাকার, সমির মালাকারকে দেয়া হয়েছে। তাদের কিভাবে দেয়া হল এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ঘরগুলোতো ভাংতে খরচ হয়েছে। মালামাল আনতে খরচ হয়েছে। আমি কি তা পকেট দিয়ে দিবো? তবে সরকারি মালামাল তিনি বিক্রি করতে পারেন কিনা তা সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার রাসেল মাঝি জানান, ইউএনও স্যার তাকে ঘর ভাঙ্গার জন্য নগদ ২ হাজার টাকা প্রদান করেন। সে মোতাবেক ঘর ভাঙ্গেন। মাঝখানে তহসিলদার নিজ ক্ষমতায় ঘরগুলো ট্রলারে করে অন্যত্র নিয়ে বিক্রি করে দেন। মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও হিজলা উপজেলার চলতি দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভ্রা দাশ জানান, তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য হিজলা ভূমি অফিসকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বরিশাল জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, প্রকল্পের কোনো জিনিস কেউ বিক্রি করতে পারবে না। করতে হলে জেলা প্রশাসনে অর্ডারের মাধ্যমে নিলাম করে বিক্রি করতে হবে। এমনটা কেউ করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি মালামাল বিক্রি করতে হলে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। কেউ এ মালামাল বিক্রি করতে পারবে না। এমন কোন ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎসঃ যুগান্তর