সরকারের পদত্যাগ ব্যতিরেকে বিএনপির নির্বাচনের যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার আওয়ামী লীগের কার্য়নির্বাহী কমিটির সভায় নির্বাচনের বিষয়ে সরকারি দলের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ”পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা তো পরিস্কার যে আওয়ামী লীগের সরকার পদত্যাগ না করলে এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এই নিয়ে আমরা কোনো কথাই বলতে চাই না। নির্বাচনে তো আমরা যাবোই না যদি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ”প্রথম শর্ত হচ্ছে, তাদেরকে রিজাইন করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে জনগনের মতামতের ভিত্তিতে এবং সেই নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সেখানে দিয়ে একটা জনগনের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ও পার্লামেন্ট গঠিত হবে।”
গতকালের আওয়ামী লীগের সভায় সরকার দলীয় নেতারা বলেছেন, বিএনপি না আসলে নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হবে না। তারা বলেছেন, বিএনপিকে নিয়ে আমরা নির্বাচন করব। সেই লক্ষ্যে কী নির্বাচনে নিয়ে কোনো আলোচনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন,” আমি মনে করি, কোনো কথাই হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে। এছাড়া কোনো প্রশ্ন উঠে না।”
মির্জা আলমগীর বলেন, ”এই ঘটনাগুলো তারা করছে তারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের মতো কথা বলে। সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, একটা মিলাদ করতে দেয়, ঈদ পূর্ণ মিলনীতে আক্রমন করে, দোয়া মাহফিলের মধ্যে আক্রমন করে এদের কাছ থেকে কী আশা করতে পারেন। সব তো মোনাফেক।”
গতকাল শনিবার দাউদকান্দিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বাসায় হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ”এই অনির্বাচিত সরকার তাদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করবার জন্যে আবার এখন থেকেই সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল আমাদের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঈদ পরবর্তি শুভেচ্ছা বিনিময় করতে তার বাড়ি দাউকান্দিতে তার বাসভবনে গিয়েছিলেন এবং সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। ওইখানে তিনি বের হয়ে তিতাসে তার একটি নিমন্ত্রণ ছিলো সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করার জন্য যখন তিনি বের হয়েছিলেন তখন অতর্কিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাঠি-সোঠা, ইট-পাটকেল ছুড়ে তার ওপরে এবং যারা তার সঙ্গে ছিলেন তাদের ওপর আক্রমন করে। ড. মোশাররফের উপরে ফিজিক্যালী আক্রমন বলে আমরা এটাকে মনে করি। আক্রমনটা এতো তীব্র ছিলো যে, কর্মীরা ড. মোশাররফ হোসেনকে তাকে বাসায় তুলে দেন এবং গেট বন্ধ করে দেন। তারপরে বৃষ্টির মতো আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ইট মারতে থাকে, পাথর মারতে থাকে…।
তিনি বলেন, ”কিছুক্ষন করে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণ করে এবং খন্দকার মোশাররফ হোসেন সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। বিষয়টা সেটা না। যেহেতু তিনি আমাদের স্থায়িী কমিটির সিনিয়র লিডার, তার ওপরে হামলাকে আমরা মনে করি স্থায়ী কমিটির ওপর হামলা, আমাদের দলের ওপর হামলা। আমরা এটাকে ছোট করে দেখতে পারি না। আওয়ামী লীগের এই হামলায় প্রমাণ হয়েছে যে, তাদের চরিত্রের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। বরং তারা নতুন উদ্যোমে বিএনপি তথা ভিন্নমতকে বিরোধী দলকে নির্মূল করবার, দমন করবার জন্য তারা চরম সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে। গণমাধ্যমকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। আপনারা দেখেছেন যে, সংবাদ মাধ্যমের যে সূচক করা হয় আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রিডম অব প্রেস কতটুকু আছে সেখানে বাংলাদেশ ১০ ধাপ নেমে গেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে একটা স্বৈরাচারি দেশে পরিণত হয়ে গেছে।”
এ সময় ড খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ওপরে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
রমজানের সময়ে নরসিংদীর পলাশে ইফতার মাহফিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান এবং বরিশালের গৌরনদীতে সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় ইফতার মাহফিলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা এবং নারায়নগঞ্জ জেলার আহবায়ক অধ্যাপক মামুন আহমেদকে চুরিকাঘাত করার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন,” আওয়ামী লীগের চরিত্র এতটুকু বদলায়নি। বরং তারা ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। মূল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে তাদের যে লক্ষ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তারা সন্ত্রাস, ভয়ভীতি দেখিয়ে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ”সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণটি হচ্ছে এই সরকার দুর্নীতিবাজ। তারা সিন্ডিকেট নিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে তাদের সমস্ত ব্যক্তিরা। এই কারণে এভাবে জনগনের ওপর ভয়াবহ একটা অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করেছে। এক লাফে যদি সরকারি ভাবে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হয়। বাজারে তো আপনি ২২০ টাকায় তেল পাচ্ছেন না। তেল নাই, উধাও হয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে চোরাকারবারী, চোরাচালানের মূল বিষয়টা। সরকার তো এখন চোরাকারবারী হয়ে গেছে।
সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি দল থেকে দেয়া হবে কিনা জানতে চাই বিএনপি মহাসচিব বলেন. ”মুভমেন্ট দেখেছেন এর আগে আমরা প্রায় এক মাস যাবত দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে আন্দোলন করেছি। অবশ্যই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে করণীয় আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি করবো।
মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ একটা মুনাফেক দল। কোনো দিনই কখনোও যে কথা তারা বলে তা তারা রাখে না। এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। জনগনের সাথে তারা প্রথম থেকেই প্রতারনা করছে। শুরু থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারা প্রতারনা করছে।”