আজিজুর রহমান দুলালঃ তালিকায় নাম থাকার পরও ১৭ মাসেও ভিজিডি কার্ড ও চাল পাননি অন্তত ১৩ দুঃস্থ নারী। তবে তাদের কার্ড দিয়ে নিয়মিত চাল ওঠানো হচ্ছে। কে বা কারা চাল তুলে নিচ্ছে তা বলতে পারছেন না ওই দুঃস্থ নারীরা।
চেয়ারম্যানের যোগসাজশে এ চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।
ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্য এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান হাদী হুমায়ুন কবির বাবু। তিনি বলেন, আমরা এক বছর আগে সবাইকেই কার্ড দিয়ে দিছি। সবাই ঠিকমতই চাল নিচ্ছে। এখন কাদের চাল কারা নিছে তাতো আমি বলতে পারি না। পুরো ইউনিয়নের ব্যাপার। সবার মুখ তো চিনে রাখতে পারি না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারিতে বানা ইউনিয়নে ৩শ ৬৬ জন দুঃস্থ নারীর তালিকা তৈরি করা হয়। সেই থেকে কার্ডধারী প্রতি নারী মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। তবে তালিকায় নাম থাকার পরও অন্তত ১৩ নারী কার্ড না পাওয়ার অভিযোগ করেন। কার্ড না পেলেও অন্য কেউ তাদের নামে চাল তুলে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
কার্ড না পাওয়া ১৩ জন হলেন, ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের কোমেলা বেগম, ৩ নং ওয়ার্ডের মোসা. রেনুকা বেগম, ৪ নং ওয়ার্ডের জাহানারা বেগম, জোসনা বেগম, ৫ নং ওয়ার্ডের সাবিনা বেগম, ৬ নং ওয়ার্ডের পারুল বেগম, ৭ নং ওয়ার্ডের মোসা. খুশি বেগম, রমেনা বেগম, নূর জাহান বেগম, সাথী খানম, ৯ নং ওয়ার্ডের মোসা. রতনা, মোসা. তানিশা বেগম, মোসা. আদরী বেগম। তাদের অভিযোগ, তালিকায় তাদের নাম থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা কার্ড ও চাল পাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বানা ইউনিয়নের একাধিক সদস্য জানান, ৩শ ৬৬ কার্ডের মধ্যে তালিকায় নাম থাকা অন্তত ১৩ দুঃস্থ নারীকে কার্ড দেয়া হয়নি। তাদের নামের কার্ড দিয়ে অন্য কেউ চাল করে আত্মসাৎ করছেন। প্রকৃত দুস্থরা ভিজিডি কার্ডের সুবিধা না পাওয়ায় সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তারা এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
৭ নং ইউপি সদস্য কাজী বাকা বলেন, আমার ওয়ার্ডে কয়েকজন আছে যাদের তালিকায় নাম আছে কিন্তু চাল পায় না। চেয়ারম্যানের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেছেন, এটা আমার বিষয় তোমাদের এ নিয়ে ভাবতে হবে না। এটা আমি দেখবো।
এছাড়াও ২ নং ওয়ার্ডে ভিজিডি তালিকায় মোসা. আন্না বেগম নামে এক মহিলার নাম রয়েছে। প্রতি মাসে চালও নেওয়া হচ্ছে তার নামে। কিন্তু এ নামে ওই ওয়ার্ডে কোন মহিলা নেই। এই নামে চাল নিয়েছে কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, শুনেছি ওই চাল নাকি মিরাজ চৌকিদার তুলে নেয়।
জানতে চাইলে মিরাজ চৌকিদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যানের লোক জাহাঙ্গীর আমার কাছ থেকে ২৫শ টাকা নিয়ে এই কার্ড করে দেয়। তারপর থেকে আমি ওই নামে চাল নিয়েছি।
এ সব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, আমরা এ বিষয়ে রিপোর্ট পেয়েছি। আইনানুগ যে ব্যবস্থা নেওয়ার তা আমরা নিবো।