আলজেরিয়ায় আগামী জুনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে সরকারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা করছে দেশটির ইসলামপন্থী দলগুলো।
দেশটির সরকার ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছে ধর্মনিরপেক্ষ সেনাবাহিনী। যদিও তারা ইসলামপন্থীদের সবসময় অবিশ্বাসের চোখে দেখছে।
এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতায় বলয়ে প্রভাব তৈরি করতে চাচ্ছে ইসলামপন্থীরা।-খবর রয়টার্সের
তবে নির্বাচনের ফল যা-ই আসুক না কেন, সামরিক বাহিনীর হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতাই থাকছে। ইসলামপন্থীরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিতে চেষ্টা করছেন।
বছর দুয়েক আগে ব্যাপক বিক্ষোভের পর প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতাফ্লিকা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালে এই অস্থিরতা তৈরি হয়। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বুতাফ্লিকা পঞ্চম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার দেওয়ার পর শুরু হয় বিক্ষোভ। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের এই বিক্ষোভকে হিরাক আন্দোলন বলে ডাকা হয়।
পুরনো ক্ষমতাসীন অভিজাতদের সম্পূর্ণ শুদ্ধিকরণের দাবিতে এখনো প্রতি সপ্তাহে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সামরিক বাহিনী ও তার মিত্রদের হাতে যতদিন সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকবে, ততদিনই এই বিক্ষোভকে এক ধরনের ভণিতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এতে পুরো জাতীয়তাবাদী দলগুলোর চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে দেশটির ইসলামপন্থীদের জন্য।
এছাড়া জাতীয়তাবাদী দলগুলোর নেতারা দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন। ইসলামপন্থী দল হারাকাত আল-বিনার প্রধান আবদেল কাদের বেনগ্রিনা বলেন, নির্বাচনে আমরা এগিয়ে থাকার প্রত্যাশা করছি।
রাজনৈতিক সংস্কারে তার দল ভূমিকা রাখতে চাচ্ছে বলেও তিনি জোর দেন। ইসলামপন্থীরা নির্বাচনে জয়ী হলে, মন্ত্রিসভায় তাদের এক ডজনেরও বেশি লোককে নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট আবদুল মাজিদ তাবুনি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসলামপন্থীরা জয়ী হলেও স্বরাষ্ট্র, অর্থ ও বিচার মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় তাদের দেওয়া হবে না। কিন্তু উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য দলগুলোর মতোই হারাকাত আল-বিনাও অর্থনীতি ও সরকারের দক্ষতা বাড়ানোর প্রতি বেশি আলোকপাত করছে। সেক্ষেত্রে সংবিধানে শরিয়া আইন অন্তর্ভুক্ত করতে খুব বেশি জোর দিতে দেখা যাচ্ছে না তাদের।
বেনগ্রিনা বলেন, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান দিতে সরকার অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। কাজেই জয়ী হওয়ার পর তারা তেলসমৃদ্দ দেশটির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা দূর করবেন।
ইসলামি মতবাদ বিষয়ক গবেষক মোহামেদ মৌলুদি বলেন, ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে ইসলামী দলগুলো বিপুল রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছে। মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেয়ে রাজনৈতিক ভোটে অংশগ্রহণেই তারা বেশি জোর দিচ্ছেন। ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেনগ্রিনা ১৫ লাখ ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে আরেকটি ইসলামী দল থেকে বেরিয়ে এসে গঠিত হয়েছিল হারাকাত আল-বিনা। জুনের নির্বাচনে তারা সামনের দিকে থাকবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
দেশটিতে ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ইসলামপন্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু সামরিক বাহিনী ভোট বাতিল করলে গৃহযুদ্ধ লেগে যায়। এতে ১৯৯৯ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে দুই লাখ আলজেরীয় নিহত হন। এর পর থেকে ইসলামী দলগুলো নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশ নিলেও তারা অনেক মধ্যপন্থা অবলম্বন করছে।