ফুটবল অনিশ্চয়তার খেলা। তবু ট্যাকটিকস, খেলোয়াড়দের শক্তিমত্তা, দলের ভারসাম্য, সর্বোপরি ফিফা র্যাঙ্কিং- সব বিচারেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব থেকে এগিয়ে ছিল লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। দলের প্রাণভোমরা লিওনেল মেসিও সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন নিজের শেষ বিশ্বকাপটি ভক্তদের জন্য উজাড় করে খেলতে চান। জয় করতে চান স্বপ্নের বিশ্বকাপ। ফলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল সৌদি আরবকে ছাপিয়ে আরও বহুদূর বিস্তৃত হয়েছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের প্রত্যাশা। কিন্তু মেসির সোমবারের দেখানো স্বপ্ন মঙ্গলবারই ফিকে হয়ে গেলো।
কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আকাশি নীলের ভিড়ে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নামটি ছিল মেসি। সেই মেসিই পেনাল্টি থেকে ম্যাচের ১০ মিনিটের মাথায় পেয়ে গেলেন গোল। এরপর লাউতারো মার্টিনেজ ১৮ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোল করে উদযাপন শুরু করলে, পুরো স্টেডিয়ামও নেচে উঠে। কিন্তু সেটি ভিআর প্রযুক্তিতে অফসাইড ধরা পড়ে। এখানেই শেষ নয় ২৯ ও ৩৫ মিনিটে আরও দুইবার বল জালে জড়িয়েও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি আলবিসেলেস্তেরা। সৌদির হাই ব্যাক লাইনের ফাঁদে পড়ে বারবার যেমন নষ্ট হয়েছে স্কালোনির শিষ্যদের আক্রমণ, তেমনি বাতিল হয়েছে তিন তিনটি গোল!
বিরতির পর ৪৮ মিনিটে আল শেহরির পোস্টে নেয়া দুর্বোধ্য অ্যাঙ্গেলের শট এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বামে ঝাঁপিয়ে পড়েও আটকাতে পারেননি। আচমকা গোলে যখন ডি পল, ড মারিয়ারা হতচকিত তখন ৫৩ মিনিটে সালেম আল দাউসেরির জোরালো শট আবারও মার্টিনেজকে বোকা বানায়। এরপর অগোছালো মেসি, অগোছালো আর্জেন্টিনা, আকাশি নীলের জার্সি পরা সমর্থকের হতাশার গল্প। সেটি আরও তীব্র হলো বক্সের বাইরে থেকে ৮৪ ও ৮৯ মিনিটে দুটো ফ্রি কিক মেসি কাজে লাগাতে না পারলে। এমনকি পোস্টে রাখা এলএম টেনের একটি হেডও দারুণ দক্ষতায় গ্রিপে নেন সৌদি গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইস। অতিরিক্ত সময়ে জটলার মধ্য থেকে মেসির ডান পায়ে নেয়া শট ঢাল হয়ে দাঁড়ানো সৌদি গোলরক্ষক আল ওয়াইসকে পরাস্ত করতে পারলেও রক্ষণভাগের খেলোয়াড় আল আমরি সেটি লাইন থেকে হেডে ফিরিয়ে দেন।
স্কালোনি শিষ্যদের সব অস্ত্র, প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় সবুজ রক্ষণব্যুহে। ফলাফল, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশন শুরুতেই তো হোঁচট খেলোই, মেসির দেখানো স্বপ্নও ফিকে হয়ে গেলো। সে স্বপ্ন আবার উজ্জ্বল করতে আললবিসেলেস্তেদের অনেক দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াতে হবে সেটি আর না বললেও চলছে।