যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যেও বিজয়ী হয়েছেন বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে বিবিসি। ১৯৯২ সালের পর রাজ্যটিতে এই প্রথম কোন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জয় পেলো।
এই বিজয় মি. বাইডেনের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং এ নিয়ে তিনি ইলেকটোরাল কলেজের মোট ৩০৬টি ভোট পেয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নর্থ ক্যারোলাইনায় প্রত্যাশিত জয় পেতে যাচ্ছেন বলে পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে তার ভোটের সংখ্যা হবে ২৩২টি।
জো বাইডেনকে হোয়াইট হাউজে যেতে জর্জিয়া বা অ্যারিজোনায় জিততে হয়নি। উইসকনসিন, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়া নীলের দখলে নিয়ে তিনি নিজের বিজয় আগেই নিশ্চিত করেছেন।
মি. ট্রাম্প, যিনি তার পরাজয় অস্বীকার করে আসছিলেন, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে জানুয়ারিতে সম্ভাব্য নতুন প্রশাসন আসতে পারে।
নির্বাচনের পর করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের একটি ব্রিফিংয়ে প্রথমবারের মতো শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে হাজির হন তিনি।
হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে মি. ট্রাম্প বলেন, “ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার কারণে এই প্রশাসন কোন লকডাউনে যাবে না, আশা করি .. ভবিষ্যতে যা কিছুই ঘটুক – কে জানে কোন প্রশাসন থাকবে। সেটা সময়ই বলবে।”
প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের থেকে কোন প্রশ্ন নেন নি।
মি. বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি জানানো এবং এক প্রশাসন থেকে অন্য প্রশাসনে যাওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত হতে রিপাবলিকান মি. ট্রাম্পের উপর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
জর্জিয়া এবং নর্থ ক্যারোলাইনা হল হোয়াইট হাউসের যাওয়ার দৌড়ে সর্বশেষ ফল আসা দুটো রাজ্য।
মি. বাইডেন এই নির্বাচনে মোট যতো ভোট পেয়েছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে মি. ট্রাম্প সমান ভোট অর্জন করেছিলেন। সে সময় মি. ট্রাম্প এই জয়কে বিপুল ব্যবধানে জয় বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান খুব সামান্য হওয়ার কারণে জর্জিয়ায় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পুনঃগণনা করা হবে, তবে বাইডেনের দলের ধারণা এতে ফলাফলে কোন পরিবর্তন আসবে না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ এনে মূল রাজ্যগুলোয় আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
প্রতিদ্বন্দ্বীর জয় নিশ্চিত হওয়ায় শুক্রবার তার দল অ্যারিজোনার একটি মামলা থেকে সরে আসে।
বাইডেনের দল ব্রিফিংয়ের অনুরোধ জানিয়েছে
মিঃ বাইডেনের বিজয়টিকে এখনও আনুষ্ঠানিক করা যায় নি, তার ট্রানজিশন দলকে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোয় যাওয়ার কোন সুযোগ দেয়া হচ্ছে না এবং নির্ঝঞ্ঝাট ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে, তহবিল সরবরাহ করছে না।
বাইডেনের মুখপাত্র জেন পিসাকি বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ব্রিফিংয়ের সুযোগ না দেয়া মি. বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণকে প্রভাবিত করতে পারে।
“এই মুহূর্তের সংকট মোকাবেলায় আপনার বর্তমান সময়ের তথ্য প্রয়োজন,” তিনি করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব তুলে ধরে বলেন। “আমাদের দল এবং আমাদের বিশেষজ্ঞদের সেই অ্যাক্সেস থাকা জরুরি।”
এর আগে, জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর দেড় শতাধিক কর্মকর্তা সতর্ক করেছিলেন যে এই ক্ষমতা হস্তান্তর বিলম্বিত হলে সেটা “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ” হতে পারে।
একটি চিঠিতে তারা জেনারেল সার্ভিসেস প্রশাসনকে- যে সরকারি সংস্থা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর দায়িত্বে রয়েছে- মিস্টার বাইডেন এবং তার রানিং মেট কমালা হ্যারিসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বলেছে যাতে “জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো পাশ কাটানো যায়।”
এদিকে, কিছু সংখ্যক রিপাবলিকানও নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনকে ব্রিফিং করার পক্ষে আহ্বান জানিয়েছে।
ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান সহযোগী সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন যে মিঃ বাইডেনের উচিত নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গোপনীয় প্রেসিডেন্ট মেমো নেয়া শুরু করা।
নির্বাচনের ফল নিয়ে এখনো অভিযোগ করে যাচ্ছেন ট্রাম্প
মিঃ ট্রাম্প ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে শুক্রবার একাধিক টুইট করে নির্বাচনের ফলাফলকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। যদিও তিনি কোন প্রমাণ দেখাননি।
তিনি জানান যে শনিবার ওয়াশিংটনের একটি সমাবেশে তিনি তার সমর্থকদের সাথে যোগ দিতে পারেন।
এই নির্বাচনকে “আমেরিকার ইতিহাসের সর্বাধিক সুরক্ষিত”, নির্বাচন বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা্। এর এক ঘণ্টার মাথায় ট্রাম্প ওই টুইট করেন।
মি. ট্রাম্পের অভিযোগ, ২৮ টি রাজ্য তার পক্ষে পড়া লাখ লাখ ভোট সফটওয়্যার মুছে ফেলেছে। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনও প্রমাণ দিতে পারেননি।
অবসকিওর টিভি নেটওয়ার্ক ওয়ান আমেরিকা নিউজ (ওএএনএন) থেকে এই অভিযোগ ওঠে এবং পরে টুইটার তাদের এই দাবিকে বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত করে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কেইলি ম্যাকেনেনি ফক্স নিউজকে বলেছেন: “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে তিনি আবারো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হবেন, দ্বিতীয় মেয়াদ থাকবেন”।