অবশেষে দেশে ফিরেছেন মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশি রায়হান কবির। মালয়েশিয়ায় থেকে মুক্তি পেয়ে নারায়ণগঞ্জের সন্তান রায়হান কবির বলেছেন, নিজেকে বদলাতে চাই না। যাদের জন্য প্রবাসে অনেক বিপদে পড়েছিলাম তাদের স্বার্থে কাজ করতে চাই। জীবনের বাকি সময় প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে যাব। শনিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার শাহী মসজিদ এলাকায় নিজ বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রায়হান। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেছিলেন।
রায়হান কবির বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে স্টুডেন্ট লিডার ছিলাম আমি। সেখানে স্টুডেন্টদের যেসব সংগঠন সেগুলোর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমি। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে বাঙালি কমিউনিটিতে আমি পরিচিত মুখ। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটে, আমি সেই এলাকাতেই থাকতাম। মূলত রেইড নিয়ে ঘটনাটা। সেজন্য বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে আল জাজিরা আমাকে খুঁজে বের করে, আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে। আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু সে ওই রেইডে গ্রেফতার হয়েছিল। আমি বিভিন্ন জায়গায় ওর জন্য অনেক তদবির করছিলাম, যেটা সবাই জানে। সেটি আমার উইক পয়েন্ট ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তুমি তোমার বন্ধুর জন্য বা তোমার কমিউনিটির জন্য লিডার হিসেবে কিছু বলতে চাও কি-না। সেই হিসেবে আমি আমার বিবৃতি দিয়েছি। আল জাজিরা আমাকে বলেছিল, ক্যামেরার সামনে মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে। আমি তো সত্য বলব, তো আমি কেন মাস্ক ব্যবহার করব? আমি মুখ ঢাকতে কোনো কিছু ব্যবহার করিনি।
রায়হান বলেন, ‘সেখানকার পুলিশ, ৯টা সংস্থা ও আইজিপি আমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন এবং জানতে পেরেছেন কোনো কিছুর প্ররোচনায় নয়, মূলত আমি প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করি বলেই তাদের স্বার্থে কথা বলেছি। আমি প্রবাসীদের জন্য কাজ করেছি, করছি। প্রবাসীদের জন্য প্রয়োজনে আমি একাই লড়ব।’
এর আগে শুক্রবার রাত একটার দিকে দেশে ফেরেন রায়হান। এ সময় বিমানবন্দরে রায়হান কবিরের স্বজনরা ও ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান তাকে রিসিভ করেন।
তিনি বলেন, আমি জেলে থাকা অবস্থায় রেডিওতে শুনেছি, মালয়েশিরার বিভিন্ন সংগঠনের অবস্থান ও কর্মসূচি জানতে পেরেছি। কিন্তু বাংলাদেশে কি হচ্ছে? সেটা জানতে পারিনি। কাল রাতে আমি যখন বিমানবন্দরে হাজির হয়েছি। তখন অস্বস্তির কারণে মাস্ক খুলতেই একজন দৌড়ে এসে বললেন, রায়হান ভাই। কিভাবে চিনেন? প্রশ্ন করতেই উত্তর দিলেন, আপনাকে পুরো বাংলাদেশ চিনে। এরই মধ্যে শত শত বাংলাদেশে আমার পাশে এসে ভিড় করলেন। ছবি তুললেন। আমার গায়ের কুচকানো শার্ট দেখে একজন তার শার্ট দিয়ে দিলেন।’
রায়হান কবিরের বাবা পোশাক শ্রমিক শাহ্ আলম বলেন, আমার ছেলে ছোট বেলা থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। তখন নিজের টাকা না থাকলেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেন। আল জাজিরার সাক্ষাৎকারেও সে প্রবাসীদের দুঃখ কষ্ট ও সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন। কোনো অন্যায় করেনি। আপনারা দোয়া করবেন, যাতে সারা জীবন রায়হান এ ভাবে মানুষের পাশে থাকতে পারেন। এদিকে, রায়হান কবির ফিরে আসায় পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত