কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের বিগত নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আটটি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেছেন বলে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন যুবলীগ নেতা ইমরুল কায়েস চৌধুরী। তিনি উখিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
বুধবার রাতে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্যে ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রকাশ্যে এ কথা বলেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েলকে উদ্দেশ্য করে ইমরুল কায়েস বলেন, ‘কায়সারুল হক জুয়েল আপনি একজন অকৃতজ্ঞ ও অমানুষ। কারণ গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে গিয়ে আপনার জন্য আটটি কেন্দ্রে আমি ভোট ডাকাতি করেছি। আমি না থাকলে আপনি কখনো উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারতেন না। যদি আপনার মনে না থাকে আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন আমার শ্রদ্ধাভাজন মাসেদুল হক রাশেদকে, যিনি এখন নারীকেল গাছ প্রতীকে ভোট করছেন। আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন আপনার মেঝ ভাই কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মার্শাল মামাকে।
তার এ বক্তব্যের ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে পুরো জেলায় তোলপাড় শুরু হয়।
উল্লেখ্য, কায়সারুল হক জুয়েল বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কক্সবাজার জেলার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা একেএম মোজ্জামেল হকের কনিষ্ঠ ছেলে। তার বড়ভাই সদ্য বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মাসেদুল হক রাশেদ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি নাগরিক কমিটির ব্যানারে কক্সবাজার পৌরসভায় নির্বাচন করছেন।
এদিকে যুবলীগ নেতা ইমরুলের এ বক্তব্যের ফলে ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ কায়সারুল হক জুয়েল ২০১৯ সালে প্রথম ইভিএম পদ্ধতির ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রক্রিয়া দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরাও।
যুবলীগ নেতা ইমরুলের ভোট ডাকাতি করে জয় নিশ্চিত করার বক্তব্যের বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল ও পৌর বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও ফোন রিসিভ করেননি।
তবে যুবলীগ নেতা ইমরুলের বক্তব্যের দায় নিবে না জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কারো উদ্ভট ও ব্যক্তিগত বক্তব্যের দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। বর্তমান সরকারের আমলে সবসময় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন বলেন, ভোট ডাকাতির বিষয়ে এক ব্যক্তির দেওয়া বক্তব্য ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০৮ কেন্দ্রে ৩৩ হাজার ৪৮৬ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আকবর আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ২৯ হাজার ৫৫৭ ভোট।