বাংলা এক্সপ্রেস ডেস্কঃ করোনা আক্রান্ত হয়ে আমিরাতে ৪৬ বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত সাত শতাধিক বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। মোট আক্রান্ত হাজারে হাজার। তবে কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট তথ্য বা পরিসংখ্যান নেই নানামুখি প্রতিবন্ধকতার কারণে। সরকারী কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের মত দেশে সাধারণের অসুস্থতা বা চিকিতসার তথ্য যতটা সম্ভব গোপন রাখা হয়। তাছাড়া ওই দেশে যে সব বাংলাদেশি আক্রান্ত তারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত, অন্য দেশের নাগরিক। এটাও তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাধা।
তবে সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন, তারা শ্রমঘন বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব রিপোর্ট পেয়েছেন তাতে বিদেশে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি প্রবাসী শ্রমিক করোনা আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হয়েছেন।
সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশির মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে
সরকারী রিপোর্ট মতে, বিদেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আড়াই শতাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মারা গেছেন।
দ্বিতীয় অবস্থানে বৃটেন। কমিউনিটি সূত্রের খবর দেশটিতে কমপক্ষে ২২০ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকের প্রাণ কেড়েছে করোনা।
এটা কেবল করোনা চিকিতসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের তথ্য। ওল্ডহোম বা কেয়ার হোমের হিসাব বাদ। দুটো মিলানোর সূযোগ কম। তবে একত্র করলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকের মৃতের সংখ্যা তিন শতাধিক হবে বলে লন্ডস্থ মিশন ও বাংলাদেশ কমিউনিটির দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা ধারণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনে থাকা বাংলাদেশি কূটনীতিক-কর্মকর্তাদের মতে, করোনায় অনেকেই আক্রান্ত। তবে তাদের হিসাব পাওয়া কষ্টকর। কারণ সরকারীভাবে তো নয়ই কমিউনিটিও আক্রান্তের কোন তথ্য পায় না বা ধারণা দেয়না। তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো ব্যক্তি মারা গেলে কমিউনিটিতে সেই খবর ছড়ায় নানা কারণে এবং তা কোনো না কোনোভাবে মিশন অবধি পৌঁছায়। সেভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের শত শত মৃত্যু রেকর্ড বা হিসাবে এসেছে।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল শ্রমবাজারের মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক করোনায় মারা গেছেন। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত ১২০ জনের মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড হয়েছে। যা সৌদিতে করোনা আক্রান্ত মোট মৃতের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এরপরেই আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৬ বাংলাদেশি। কুয়েতে করোনায় মারা গেছেন ২৫ জন আর কাতারে ৬ জন। তবে উপসাগরীয় বা মধ্য এশিয়ার অন্য দেশে হাজার হাজার বাংলাদেশি আক্রান্ত হলেও মৃত্যু নেই বা রেকর্ড হয়নি। বাংলাদেশ মিশনগুলোর রিপোর্ট মতে, ইউরোপের মৃত্যুপুরী খ্যাত ইতালিতে হাজার হাজার লোক করোনায় মারা গেছেন। সেই ভিড়ে ৯ জন বাংলাদেশিও প্রাণ হারিয়েছেন। ইউরোপের অপর দেশ সুইডেনে মারা গেছেন ৮ বাংলাদেশি। ফ্রান্সে ৫, স্পেনে ৫ এবং পর্তুগালে ১ জন বাংলাদেশির প্রাণ কেড়েছে করোনা। কানাডায় ৯ বাংলাদেশির মৃত্যু ছাড়াও মালদ্বীপ, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় একজন জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন।
আক্রান্ত ৩৫ হাজার প্রবাসী শ্রমিকের অর্ধেকই সিঙ্গাপুরে
এদিকে মিশনগুলোর রিপোর্ট এবং সেগুনবাগিচার করোনা সেলের হিসাব মতে, বিদেশে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ হাজার বাংলাদেশির অর্ধেকই সিঙ্গাপুরে। দেশটিতে মোট বাংলাদেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গতকাল পর্যন্ত ১৭ হাজার ছাড়িয়ে বলে বাংলাদেশ মিশন নিশ্চিত করেছে। এরপরেই সৌদি আরবের অবস্থান। দেশটিতে শ্রম কাউন্সিলরসহ প্রায় ৯ হাজার বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত। অবশ্য জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট মানবজমিনকে জানিয়েছে- শ্রম কাউন্সেলর মো.আমিনুল ইসলাম (গত ১২ এপ্রিল আক্রান্ত হয়েছিলেন) দীর্ঘ এক মাস চিকিৎসা শেষে এখন অনেকটাই সুস্থ। ওদিকে করোনা সেলের তথ্য মতে, কাতারে প্রায় সাড়ে তিন হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিন হাজার, কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ৪ জন স্টাফসহ প্রায় আড়াই হাজার, বাহরাইনে ৪০০, ইতালিতে ২০০ এবং স্পেনে দেড় শতাধিক বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত। সিঙ্গাপুরসহ ব্যাপকভাবে বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত এমন ৬ দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত কূটনীতিকের (বাংলাদেশি) সঙ্গে বৃহস্পতিবার মানবজমিনের কথা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মতে, সৌদি আরব ছাড়া অন্যত্র আক্রান্ত বাংলাদেশিদের মধ্যে অবস্থা অতটা গুরুতর বা সংকটাপন্ন নয়। তবে সৌদি সরকারও গুরুতরদের অত্যধিক কেয়ার নিচ্ছে। তারপরও ঈদের ছুটিতেই কমপক্ষে ২০ জন মারা গেছেন। বাকী দেশগুলোতে অধিকাংশ কর্মীই সুস্থ হয়ে গেছেন বা সুস্থতার পথে রয়েছেন। সিঙ্গাপুরের পরিস্থিতি অন্যদের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন। দেশটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি অর্থাৎ ১৭ হাজার আক্রান্ত হলেও স্রষ্টার কৃপা একজন বাংলাদেশিও মারা যাওয়ার ঘটনা নেই। করোনা আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশি প্রায় দু’মাস কোমায় ছিলেন। মিরাকল, অবশেষে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এখন তার কণ্ঠস্বর ফেরানোর চিকিতসা অর্থাৎ স্পীচ থেরাপি চলছে। দেশটির বাংলাদেশ মিশন জানায়, দু’সপ্তাহ আগে সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশি করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। ঘটনাটি নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ পড়ে যায় সিঙ্গাপুর সিটিতে। মৃত ব্যক্তির করোনার টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ এলে বিস্তৃত তদন্ত শুরু হয়। অবশেষে রিপোর্ট আসে করোনায় নয়, ওই বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে!
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক মানবজীবন