মানবজাতি যত বার পথ হারিয়ে মহান আল্লাহর পথ থেকে দূরে গেছে ততবারই এক একজন পথ প্রদর্শক আল্লাহর পক্ষ থেকে জমিনে প্রেরিত হয়েছিলো। এমন এক বাস্তবতার নিরিখে আইয়্যামে জাহেলিয়ত যুগে ধরণীর বুকে শুভ আগমন হয়েছিলো প্রিয় নবীজির। যিনি মানুষকে এক আল্লাহর দাওয়াত দিয়ে ফিরিয়ে এনেছিলো শিরক থেকে তৌহিদের দিকে, আঁধার থেকে আলোর দিকে, অবিচার থেকে ইনসাফের দিকে, বৈষম্য থেকে সাম্যের দিকে, বন্দিদশা থেকে মুক্তির দিকে।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আমিরাতের ইন্টারন্যাশনসাল উইনার্স ক্লাবে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখাসমূহের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিল ও হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এবং ফাতেমায়ে ছানি রুহানী আম্মাজান রাহমতুল্লাহি আলাইহা এর বার্ষিক ফাতেহা শরীফ উপলক্ষে আয়োজিত বিশাল মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন চট্টগ্রাম কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মাননীয় মহান মোর্শেদ, আওলাদে রাসূল (দ.) হযরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেব।
এসময় তিনি আরও বলেন, ইসলামের যে শাশ্বত সোনালী সৌন্দর্য আজ সবাই দেখছে তা প্রিয় নবীজির জীবনের আলো থেকে আলোকিত। প্রিয় নবীজির আগমনে আমরা কোরান পেয়েছি, নামাজ পেয়েছি, হাজার বছর থেকে উত্তম রাত্রি কদর পেয়েছি, লায়লাতুল নিসফে মিন শাবান পেয়েছি এত সব নিয়ামত যাকে আল্লাহ দান করেছেন উনার শান সম্মান এবং উনার আগমনের মুহুর্ত কতটা অমূল্য তা একমাত্র আল্লাহপাক জানেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্য, আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রিয় রাসুল (দ.) পৃথিবীতে এসেছেন। সেই মহান দায়িত্ব নবীজির ওয়ারিশ হিসেবে খলিফায়ে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রা.) এতটাই নিঁখুতভাবে পালন করেছেন যে, নবীজি খুশি হয়ে উনাকে মদিনা শরীফে ডেকে নিয়ে অলৌকিকভাবে বায়াতের মাধ্যমে খলিফায়ে রাসূল (দ.) এর মর্যাদা দান করেছেন। আধুনিকতার বেড়াজালে পড়ে দিশেহারা মানুষকে বিশেষকরে যুব সমাজকে উনি টেনে তুলেছেন হতাশা থেকে আশার দিকে, পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বের দিকে, অশ্লিলতা থেকে সুন্নাতের দিকে, বেহায়াপনা থেকে ফয়েজে কুরআনের অমৃত সুধার দিকে। এ জন্য যিনি দিন-রাত আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করেছেন, কেঁদেছেন। সবসময় দোয়া করতেন- হে আল্লাহ আমার তরিক্বতকে আরব থেকে আজমে, জ্বীন থেকে ইনসানের মাঝে পেঁৗছে দাও। আরবভূমিতে আজকের এশায়াত মাহফিল হযরত গাউছুল আজম (রাঃ) এর দোয়া কবুলের বাস্তব উদাহরণ। মহান আল্লাহ কুরআনুল কারীমে বলেছেন, “যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়” (সূরা শামস: ০৯)। মানুষের ক্বলব সহ অভ্যন্তরীন লতিফায় নবীজির বাতেনী নূর দান করে মানুষকে সত্যিকারে দ্বীনের উপলব্ধির জন্য সমস্ত জীবন নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন হযরত গাউছুল আজম (রাঃ)। প্রিয় নবীজির নূর ক্বলবে নেওয়ার পর একজন মানুষ নিখাদ আশেকে রাসুলে পরিণত হয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত একজন মানুষের ক্বলবে যখন নূর আসে তখন সেই ব্যক্তির তিনটা পরিবর্তন হয় ১. দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমে ২. আখেরাতের দিকে বেশি ধাবিত হয় ৩.সবসময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে। এসমস্ত বৈশিষ্ট্য এই তরিক্বতপন্থিদের জীবনে দৃশ্যমান। খলিফায়ে রাসুলের তরিক্বতে একজন মানুষ অন্র্Íভুক্ত হয়ে দৈনিক ১১১১ বার দরূদ শরীফ আদায় করে কখনো ক্বাজা হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদায় করে দিতে হয়। নবীজির প্রতি ভালোবাসার নিবেদন কতটুকু থাকলে নিজে যেমন এই আমল করেছেন লক্ষ লক্ষ তরিক্বতপন্থিদের দিয়েও এই আমল বাস্তবায়ন করাচ্ছেন।
বিশ্বজোড়া এই তরিক্বতের যত প্রসার হবে পৃথিবীর বুকে ততবেশী রহমত নাজিল হবে। হাদীস শরীফে রয়েছে একবার দরূদ পড়লে দশটি রহমত বর্ষন করবেন, দশটি গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং দশটি ঈমানী মরতবা তথা পদমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। (মুসনাদে আহমদ ও নাসাঈ)। খলিফায়ে রাসুলের তরিক্বতপন্থিরা দৈনিক ১১১১বার দরূদ শরীফ পড়ে বিশ্বকে শান্তিময় করার ক্ষেত্রে নিরব ভূমিকা পালন করছে। চলাফেরায়, লেনাদেনায়, কথাবার্তায় সবক্ষেত্রে নবীজিকে অনুসরণ ও অনুকরণের ক্ষেত্রে খলিফায়ে রাসুলের জীবন যুগ থেকে যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হেদায়তময় আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব সংকটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখনো শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। যেখানে ইংল্যান্ড সহ ইউরোপ আমেরিকার অনেক প্রভাবশালী দেশ এ সংকটে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আল্লাহর রহমতে, গাউছুল রাদিয়াল্লাহু আনহুর উছিলায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুগোপযুগী সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ এখনো ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করতে উপস্থিত মুসলিম মিল্লাতের প্রতি আহবান করেন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং প্রধানমন্ত্রী কাগতিয়া দরবার শরীফের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাণী প্রদান করায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তকরির মোবারকের শেষ প্রান্তে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী দ. উপলক্ষে আরব আমিরাতের মাটিতে সর্ববৃহৎ এই মাহফিল করার সুযোগ করে দেওয়াই আমিরাতের সাতটি প্রদেশের শাসকদের ধন্যবাদ প্রদান ও তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাননীয় প্রধান অতিথি হুজুর কেবলা মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেব।
এর আগে মাননীয় প্রধান অতিথি হুজুর কেবলাকে এক নজর দেখতে ও নুরানী তকরির মোবারক শুনতে আমিরাতের সাতটি প্রদেশ থেকে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে ইন্টারন্যাশনসাল উইনার্স ক্লাব রূপ নেয় জনসমুদ্রে। ক্লাবের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কোথাও ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই।
মৌলানা মুহাম্মদ হাসানের পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া মাহফিলে নাতে মোস্তফা (দ.) পেশ করেন মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান মিনার ও পবিত্র খছিদা শরীফ পেশ করেন যথাক্রমে মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন ও মুহাম্মদ নুরুল আজিম ফারুক। এতে খলিফায়ে রাসুল (দ.) এর শান মোবারকে বিশেষ খছিদা শরীফ পেশ করেন মুহাম্মদ ফয়জুল আজিম সুমন।
সাংগঠনিক তদারক পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ আসিফ মুরাদ ও আল আবীর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহামুদুল হাসান সাজ্জাদের যৌথ পরিচালনায় ও দুবাই কমিউনিটির জনপ্রিয় প্রবীণ ব্যাক্তিত্ব আলহাজ্ব মুহাম্মদ হারুন এম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে বক্তব্য রাখেন মাওলানা মুহাম্মদ মাহাবুবুল আলম বোগদাদী, আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ জাফর, আলহাজ্ব মুহাম্মদ নুরুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাদের সহ আমিরাতের বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতৃবৃন্দরা।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সালতানাত অব ওমান এবং কাতারের বিভিন্ন শাখা সমূহের তরিক্বতপন্থিরা আমিরাতে অনুষ্ঠিত এ মাহফিলে লাইভে ভাচুর্য়ালী যুক্ত ছিলেন।
প্রবাসীদের অনুরোধে বাংলাদেশ থেকে আমিরাতে এসে গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়ে বিশ্ব মুসলিমকে ধন্য করায় মাননীয় প্রধান অতিথির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা। প্রিয় নবী দ. এর শানে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় এই বৃহৎ জমায়েত মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন আমিরাতের বিশিষ্টজনেরা।
মাহফিল শেষে প্রধান অতিথি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি, অগ্রগতি ও উপস্থিত সকলের ইহকালীন কল্যাণ, পরকালীন মুক্তি এবং কাগতিয়ার গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন।