বাসুদেব বিশ্বাস, বান্দরবান : বান্দরবান পার্বত্য জেলার নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে ও ‘আমাদের জীবন, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক প্রকল্পের সহযোগিতায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সৃজনশীল কাজের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১০ মার্চ (শুক্রবার) বেলা ৩টায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুরাইয়া আক্তার সুইটি।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের মাস্টার ট্রেইনার সুমিত বণিক ও মার্গারেট ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাই প্রু নেলী। ডনাই প্রু নেলী তার বক্তব্যে বলেন,এই প্রকল্পটি ২০১৯ সাল থেকে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ৯০টি কিশোরী ক্লাবের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ের প্রান্তিক পর্যায়ের কিশোরী ও যুব নারীরা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা, মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিখছে ও দক্ষতা অর্জন করছে। যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে দক্ষতার সাথে জীবন পরিচালনায় বেশ সহায়ক হবে। সেই সাথে নারীর প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন, অবিচারের প্রতি জোড়ালো প্রতিবাদ এবং শক্ত হাতে প্রতিরোধে প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রতিশ্রুতি আমি বিনীতভাবে কামনা করছি। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘‘ ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন ”। এটিকে স্বার্থক করতে হলে, পাহাড়ের যেসকল এলাকায় মেয়েদের কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা এখনো পৌঁছেনি, সেগুলোতে প্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। সেই সাথে ডিজিটাল স্পেসে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের যৌন হয়রানি ও হুমকি বন্ধে প্রশাসন আরো তৎপর হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুরাইয়া আক্তার সুইটি বলেন, নারী দিবস নারীদের সাফল্য, বৈষম্যের কথা তুলে ধরা এবং অবদানের স্বীকৃতি জানানোর দিবস। আজকে যারা কিশোরী হিসেবে আমাদের সামনে বসে আছে, তারাই আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ। এদের জীবন, স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। নারীর প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আজকে এই নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের অসংখ্য পর্যটক ও দর্শকের সামনে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা যে সৃজনশীল প্রতিভা প্রদর্শন করলো, সেটি অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। আর আজকের এই মনোরম পরিবেশে অনুষ্ঠানটি করার জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন আমাদের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার নারী পুরুষের সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে, আমাদের জেলা প্রশাসন সেই লক্ষ্য অর্জনে তৎপর। আমি এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও অংশগ্রহণকারীদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।
অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের প্রকল্প সমন্বয়কারী অং জাই উই চাক এর সার্বিক পরিচালনায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে কুলসুম,মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরীসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে প্রকল্পের কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা তাদের সৃজনশীল কাজের প্রদর্শন হিসেবে দেয়ালিকা, ছোট নাটিকা, নৃত্য, দলীয় গান, চিত্রাংঙ্কন ইত্যাদি আগত অতিথি ও পর্যটন কেন্দ্রের দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে গণস্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মী, প্রকল্প বাস্তবায়ন সহযোগী সংস্থা একেএস, গ্রাউস ও তহ্জিংডং এর প্রকল্প সমন্বয়কারী, প্রোগ্রাম অফিসার কাম ট্রেইনার, লবি এন্ড এডভোকেসি অফিসার, প্রোগ্রাম ফ্যাসিলিটেরগণ, কিশোরী ক্লাবের মেন্টর ও কিশোরী সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।