যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভারতের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যবসায়ী গৌতম আদানির বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আনার পর দেশটির রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের এমপিরা এই অভিযোগের ব্যাপারে তদন্তের দাবি জানিয়ে সংসদের অধিবেশন শুক্রবারও দ্বিতীয় দিনের মতো ভণ্ডুল করে দিয়েছেন।
গৌতম আদানির সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অনেকেই অভিযোগ করেন যে এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি খুব দ্রুত এতো ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন। হিনডেনবার্গ রিসার্চ নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি গত সপ্তাহে গৌতম আদানির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজিও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ এনেছে।
এই অভিযোগ ওঠার পর থেকেই এই গ্রুপের সব সংস্থার শেয়ারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সরকার এখনও চুপ করে রয়েছে।
শুক্রবার সকালের অধিবেশনে বিরোধী নেতারা অভিযোগের তদন্ত দাবি করলে ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তের জন্য তারা যৌথ সংসদীয় কমিটি অথবা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে একটি প্যানেল গঠনের দাবি জানায়।
এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে মাত্র কয়েকদিনেই আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির শেয়ারের বাজারমূল্য ১০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার পড়ে গেছে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে যে আদানি গ্রুপ কয়েক দশক ধরে শেয়ারবাজারে কারসাজি এবং তাদের হিসাব-নিকাশে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
জবাবে আদানি গ্রুপ বলেছে রিপোর্টে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সেগুলো অসত্য এবং বিদ্বেষপূর্ণ। শুধু তাই নয়, এই রিপোর্টকে তারা “ভারতের ওপর আক্রমণ” হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
কিন্তু আদানি গ্রুপের তাৎক্ষণিক ও শক্ত এই প্রতিক্রিয়ার পরেও তাদের শেয়ারের দরপতন বন্ধ হয়নি। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি এক সপ্তাহ আগেও ছিলেন এশিয়ার এক নম্বর এবং বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি। কিন্তু হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর তার নাম এখন শীর্ষ দশজন ধনী ব্যক্তির তালিকার বাইরে চলে গেছে।
ফোর্বসের হিসেবে তিনি এখন বিশ্বের ১৫তম ধনী ব্যক্তি। বর্তমান তার ধনসম্পদের পরিমাণ ৭,৪৭০ কোটি ডলার। গৌতম আদানি মালিকানাধীন আদানি গ্রুপ ভারতের অন্যতম বৃহৎ একটি কোম্পানি।
এই গ্রুপের প্রধান কোম্পানিটির নাম আদানি এন্টারপ্রাইজেস যারা নানা ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর পরিচালনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবসা।
বিরোধী দলের এমপিরা আদানি ইস্যুতে বৃহস্পতিবারও সংসদ অধিবেশনের সময় বাধা দেয়। এর আগে অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে তারা সংসদে আলোচনার দাবি জানায়। তাদের সেই দাবি সরকার প্রত্যাখ্যান করার পর তারা সংসদ অধিবেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
বিরোধী এমপিরা বলেন তাদের দাবি মানা না হলে তারা সংসদ চলতে দেবেন না। “এবিষয়ে তদন্তে কী হচ্ছে সেটাও প্রতিদিন জানাতে হবে,” বলেন প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়্গে।
বিরোধী কংগ্রেস আরো অভিযোগ করেছে যে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আদানি গ্রুপে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করেছে। এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় হুমকির মুখে পড়েছে।
এবিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি।
বিরোধী কংগ্রেস ঘোষণা করেছে যে তারা সারা দেশে আদানি গ্রুপের যতো কোম্পানি আছে সেগুলোসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে সোমবার তারা প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করবে। কংগ্রেসের নেতা কে সি ভেনুগোপাল অভিযোগ করেছেন যে “বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাহায্য করছে।”