আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশের মানুষের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ হবে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার বিধিনিষেধ কার্যকরের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য খুশির নয়, লজ্জার। এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী।
আজ বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ’র সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাদের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেই কারণে এদেশের কোনো মানুষ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। সমস্ত রাজনৈতিক দল একই কথা বলছে। তারপরও এই আওয়ামী লীগ সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে, তারা দল ভাঙার চেষ্টা করছে। এগুলো করে লাভ হবে না। মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। মানুষ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এই দাবিতে আমরা রাজপথে আছি। যতই নির্যাতন করুক আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দেশের মানুষের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) এসেছিল র্যাব ও তাদের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এরপর সামগ্রিকভাবে ভিসা নীতি। এই ভিসা নীতি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া দেশগুলোর ওপর পড়েছে। যে দেশেগুলো মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়, গায়ের জোরে গুম-হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় সেই দেশগুলোর বিরুদ্ধে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই ভিসা নীতিতে নাকি আমাদের সাংবাদিকরাও পড়বেন, মিডিয়ার কথা বলা হয়েছে। ভিসা নীতিতে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, বিচারক, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পড়বেন। বাদ থাকল কে? কেন এই জাতিকে এই অবস্থার মধ্যে পড়তে হলো? অত্যন্ত ভয়ানক অবস্থার মধ্যে আমরা পড়েছি। অনেকে ওইভাবে চিন্তা করছেন না; অনেকে খুব খুশি হয়েছেন। এটা তো খুশির ব্যাপার না, এটা লজ্জার, শেইম।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এজন্য সম্পূর্ণ দায়ী শেখ হাসিনার ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী সরকার, যারা আজকে নিজেদের স্বার্থে ক্ষমতায় টিকে থাকার গোটা দেশ ও জাতিকে জিম্মি করে ফেলেছে। তাদের কথা শুনলে মনে হবে না, এই দেশে কোনো ভদ্রলোক বাস করে, কোনো স্বাধীন মানুষ বাস করবে। এই দেশে শুধু বাস করবে তারা, আর আমরা প্রজা।’
এ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দলের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং দ্রুত সাজা দেওয়ার বর্ণনা দেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহানের একটি মামলা রায়ের পর্যায়ে আছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মী তাদের নিজের বাসায় থাকতে পারেন না। তারা অন্যত্র বাসাভাড়া করে থাকেন। প্রতিদিন তাদের মামলার হাজিরা দিতে আদালতে যেতে হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান ভাইয়ের ভাটারা থানার একেবারেই ঢাহা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলার ট্রায়াল হয়ে গেছে, আজকে রায় ছিল। এই যে মানুষের টেনশন। প্রতিটি মানুষকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। আমাদের দলের সব সিনিয়র নেতাদের মামলাগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আইন মন্ত্রণালয়ে একটি সেল তৈরি করেছে, কত দ্রুত সব সিনিয়র নেতাদের মামলাগুলো ট্রায়াল করে, সাজা দিয়ে নির্বাচনে অবৈধ বলে ঘোষণা করা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গিয়ে যেসব কথা বলেন, তার কথায় বাংলাদেশকে দুই শক্তির মধ্যে মুখোমুখি করে দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য কখনো সুখকর নয়, এটা উদ্বেগজনক।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আ স ম হান্নান শাহ্ স্মৃতি সংসদ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও বিএনপিনেতা মজিবুর রহমানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, বেনজির আহমেদ টিটু, প্রয়াত হান্নান শাহ’র ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আজিজুর রহমান পেরাসহ আরও অনেকে।