অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শ্রমিকদের রাজপথে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে সরকার জোর করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তারা আজকে শ্রমিক শ্রেনীসহ সকল মানুষের অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে। আপনারা ইচ্ছা করলে সমাবেশ করতে পারেন না, আপনারা ইচ্ছা করলে ইউনিয়ন করতে পারেন না। আজকে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবিতে থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আসুন আমরা আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করি, দেশের সমস্ত শ্রমিক শ্রেনীকে সংগঠিত করি। দেশে বরাবরই শ্রমিকরাই পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমাদের অতীতে যে গৌরবময় আন্দোলন হয়েছে সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে শ্রমিকরা। শুধু এখানে বসে শ্লোগান দিলে হবে না। আপনাদেরকে রাজপথে শ্লোগান দিতে হবে এবং জনগনকে সংগঠিত করে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরকে পরাজিত করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে।
‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে’ ‘চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে’ ইত্যাদি শ্লোগান ধরেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, ” আসুন এই শ্লোগান নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হবো।”
আজ ১ মে ২০২২ রোববার, সকালে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে র্যালীপূর্ব এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মে দিবসের এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। পরে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রা করে কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে পৌঁছান। মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শ্রমিক দলের নেতারা তাতে অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে আকাশচুম্বি। চালের দাম বেড়েছে ১০ গুনের মতো, তেলের দাম বেড়েছে, লবনের দাম বেড়েছে। আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা কি কষ্টের মধ্যে আছেন তা আমার থেকে আপনারা ভালো জানেন। সেই কষ্ট সরকারের কানে যায় না। তারা ন্যায্য মূল্যে শ্রমিকদেরকে চাল-ডাল-তেল দিতে পারে না।
তারা বড়লোকদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করে কিন্তু গরীব মানুষদের জন্য কোনো হাসপাতাল তৈরি হয় না।শ্রমিকরা বিনা পয়সায় চিকিতসা পায় না, তাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পায় না। সব কিছু থেকে এদেশের শ্রমিক শ্রেনী বঞ্চিত। আজকে বড় বড় মেগা প্রজেক্টের কথা, বড় বড় মেগা উন্নয়নের কথা সরকার বলে কিন্তু একই সঙ্গে শ্রমিক ভাইদের জন্য তারা কোনো কিছু করে নাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রায় ৩৫ লক্ষ্যের উপরে নেতা-কর্মী তার মধ্যে শ্রমিক ভাইয়েরাও আছেন অসংখ্য। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, ৬’শ অধিক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহাস্রাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে। বিনা বিচারে আটকাবস্থায় তাদেরকে গুলি করা হয়।এই অবস্থায় তাদেরকে চলতে দেয়া যেতে পারে না।
মেগা উন্নয়ন করছেন ভালো কথা। আমি না খেয়ে থাকবো আর আপনি বেগম পাড়া অথবা দুবাইতে অথবা মালয়েশিয়াতে বাড়ি করবেন এটা হতে পারে না। আমরা একাত্তরের যুদ্ধ করেছিলাম একটা বৈষ্যমহীন রাষ্ট্র, একজন মানুষের আয়ের সমতা, ন্যুনতম যেটুকু বেঁচে থাকার জন্য দরকার তার নিশ্চয়তা আমরা চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে আজকে ৫০ বছর পরেও আমাদেরকে চরম পরিতাপের সঙ্গে বলতে হয় সেই অধিকারগুলো আদায় হয়নি।
এই সরকার জনগনের দ্বারা সম্পূর্ণ ভাবে প্রত্যাখাত হয়েছে। সরকারের সাথে জনগনের কোনো সম্পর্ক নাই। শ্রমিক শ্রেনীর কোনো সম্পর্ক নাই। আজকে সব অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে।এই সরকার সম্পূর্ণভাবে পরনির্ভরশীল হয়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্য কোনো স্বার্থ দেখে না। এই রাষ্ট্রকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক র্যাব ও এর ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকারের ভারতের সহযোগিতা চাওয়ার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ,শ্রম বিষয়ক সহ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লাসহ শ্রমিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
নয়াপল্টন কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দল ও দক্ষিন কোরিয়া বিএনপির উদ্যোগে দুইটি পৃথক অনুষ্ঠানে দলের গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঈদ উপহার ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।