
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর হাকালুকি হাওরের কৃষকেরা বাদাম, সূর্যমুখী, সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টাসহ নানা সময়ে নানান রকম সব্জি চাষে আগামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে একধাপ এগিয়ে।
মৌলভীবাজারের জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা ও সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ এবং গোলাপগঞ্জ এ পাঁচটি উপজেলা জুড়ে বৃহত্তম হাকালুকি হাওর সীমারেখা। হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এবার রবিশস্য আবাদে স্বপ্ন পূরণে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে।
বর্ষাকালে ঢেউ আর বানের পানির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষেরা শুষ্ক মৌসুমে সব্জি আবাদ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মৌসুমে বাদাম, সূর্যমুখী, সরিষা, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, ফরাস, টমেটো, করলা, কাঁচামরিচসহ নানান জাতের সব্জির ফলনে একধাপ এগিয়ে। বাজারে মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরা উৎফুল্ল ও উচ্ছসিত।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৫টি উপজেলায় প্রায় দুই হাজার তিনশ’ হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষিবিভাগ সূত্রের বরাতে জানা গেছে বেলে, দো-আঁশ ও এটেল মাটিতে তেল জাতীয় ফসল বাদাম, সূর্যমুখী ও সরিষার ফলন ভাল পাওয়া যায়। তাই এবার হাকালুকি হাওর বেষ্টিত উপজেলাগুলোতে তেল জাতীয় ফসল বেশী চাষে উৎপাদন ভালো হয়েছে।
রবি মৌসুমের শুরুতে বপন করা সূর্যমুখী ও সরিষা এখন ঘরে তুলছেন কৃষকেরা। হাকালুকির দিগন্ত জুড়ে যেন সূর্যমুখী ও সরিষার হাসি কৃষকের চোখেমুখে। মাঠের পর মাঠ জুড়েই হলুদ ও সবুজের সমারোহ। কৃষি বিভাগ উন্নত জাতের বীজ ও সার দিয়ে ফসল চাষে কৃষকদের সহযোগিতা করায় এ জাতীয় ফসল চাষে দিনদিন কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
এছাড়া পলিযুক্ত মাটিতে মিষ্টি কুমড়া, ফরাস, তরমুজ, বেগুন, করলা, কাচামরিচসহ এ জাতীয় সব্জির ফলন ভাল হয়েছে। বিক্রি করে ভাল মূল্য পাচ্ছেন কৃষকরা।
জুড়ী উপজেলার বেলাগাও গ্রামের কৃষক মোঃ আতিকুর রহমানের পুত্র আল-আমিন আহমদ জানান, এ বছর দশ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় প্রায় ৩ থেকে ৪ মন সরিষা পেয়েছেন। সারা বছরের পরিবারের তেলের যোগান রেখে প্রতি মন ৪ হাজার টাকা দরে ২০ মন সরিষা বিক্রি করেছেন।
হাকালুকি হাওরে সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষাণ কৃষাণীরা সরিষা ও সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলাদি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে ভুট্টা চাষিরাও অবসর বসে নেই।
ভুট্টা পরিপক্ক হওয়ায় তারাও এখন ভুট্টা তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকে ক্ষেতের মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, করলা, ফরাস সহ বিভিন্ন ধরনের সব্জি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা মোঃ আলমগীর মিয়া বলেন, আফতাব আমেনা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ মিঠুর অর্থায়নে এবছর ২০০’শ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বিক্রয় মূল্য ১ কোটি টাকা হবে বলে আশাবাদী।
কৃষি বিভাগ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাননি। তারা যদি সহযোগিতা করতো তাহলে আরো বেশি ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। বিশ্ববাজারে কৃষি পন্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ায় দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুট্টা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ভুট্টা আহরণ শুরু হয়েছে। ভুট্টা থেকে পোল্ট্রি এবং গরুর খাদ্য হিসেবে সাইলেস তৈরি করা হচ্ছে।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান খাঁন বলেন, আমরা কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ভাল মানের বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করছি এবং রোগ বালাই প্রতিরোধে পাশাপাশি এসব দমনে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি ও সহয়তা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।