করোনা সংক্রমণকালে সরকার মানুষকে রক্ষা করা ও মৃত্যুহার কমানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। দুর্ভাগ্য, করোনাভাইরাস সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে। এটা অত্যন্ত কষ্টকর ও দুঃখজনক। তবে আমরা চেষ্টা করেছি যতদূর সম্ভব মানুষকে রক্ষা করা এবং মৃত্যুহার কমানোর। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা পরিকল্পনা করেছি। পদক্ষেপ নিয়েছি। তার সুফল মানুষ পাচ্ছে। দেশের মানুষ আরও সচেতন হলে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মেনে চললে করোনা মোকাবিলায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেতো।’
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
করোনা সংক্রমণকালের বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। উন্নয়ন বাজেট আমরা দিয়েছি দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার। আমি জানি হয়তো করোনার কারণে সবটুকু আমরা অর্জন করতে পারবো কি পারবো না এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেকে সেই প্রশ্ন তুলেছেন। বাজেট বক্তৃতায় এটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। এটা বলবো, আমরা আশাবাদী।’
তিনি বলেন, ‘ঝড়ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ, রোগ-শোক এগুলো থাকবেই। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকতে পারে না। জীবন তো চলমান। জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর সেদিকে লক্ষ রেখেই যদি কখনও বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়, তখন যেন তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি তা মাথায় রেখেই এই বাজেটটি দিয়েছি। যদি ভালো হয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। আর যদি সারা বিশ্বে স্থবিরতা চলে, আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। তবে চলমান থাকবে আমাদের অর্থনীতি। সেই লক্ষ্যেই আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের কারণে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে এই সংসদটি চলেছে। মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত এবং করোনার কারণে সব জায়গায় অর্থনীতির চাকা বন্ধ। যোগাযোগ বন্ধ। মানুষের স্বাধীন জীবন যেন একটি অদৃশ্য শক্তির কারণে স্থবির হয়ে গেছে। এই ধরনের অবস্থা কিন্তু অতীতে কখনও দেখা যায়নি। ঠিক সেই অবস্থার মধ্যে আমরা দেশের মানুষের জীবনমান রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেই। করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’
করোনা সংক্রমণের ধারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি জায়গায় আঘাত করার করোনার নিজস্ব একটা পদ্ধতি আছে। প্রথমে হয়তো একজন, তারপর দুই জন। তারপর দেখা গেলো ১০ জন। এভাবে কিন্তু বাড়তে থাকে। সিঙ্গাপুরের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিল, সেটাই দেখা গেছে যে মে মাসের পর থেকে আস্তে আস্তে এটা বাড়বে। জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। তারপর এক সময় এটা হয়তো কমতে থাকবে। ইউরোপেও এই অবস্থা রয়েছে। আমেরিকায় এখনও ভয়াবহ অবস্থা। চীন থেকে এটার শুরু। চীন নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে এটা ছড়িয়ে যায়। পৃথিবীর বোধহয় তিন-চারটি দেশ ছাড়া প্রায় সব দেশই এই করোনার দ্বারা আক্রান্ত। এমন একটা ভাইরাস যা চোখেও দেখা যায় না, একটা অদৃশ্য শক্তি। অথচ এর জন্য সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কগ্রস্ত। এই অবস্থার মধ্যে চলতে গিয়ে আমাদের দেশের মানুষ করোনাভাইরাসে যেন নিঃস্ব হয়ে না যায়, কষ্ট না পায়।’