বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ৫২তম বার্ষিকীতে জাতির বীর সন্তানদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে দিনের প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।
শহীদ বেদীতে প্রথমে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির পরপরই জাতির সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর সেখানে এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে বেজে উঠে করুণ সুর।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন৷
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুল-উল আলম হানিফ এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
এরপর শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
কেন্দ্রীয় চৌদ্দ দলের পক্ষ থেকে মাহবুব-উল-আলম হানিফের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর ফুল দেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এবং সংসদের হুইপ।
এরপর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নেতৃত্বে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও শ্রদ্ধা জানান স্মৃতিসৌধে।
শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সন্তানরা।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের শ্রদ্ধা জানানো শেষে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধ। সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানার নিয়ে দলে দলে জনস্রোত প্রবেশ করে স্মৃতিসৌধে।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বজ্রবাণীর পর বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে ঢাকাকে মৃত্যুপুরী বানিয়ে ফেলে পাকিস্তানি বাহিনী।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা ইপিআরসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ হলেও পাকিস্তানি সেনাদের ভারী অস্ত্রের সামনে তা টিকেনি বেশিক্ষণ। মেশিনগান, কামানের গোলার পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় শহরজুড়ে।
পৈশাচিক বর্বরতার মধ্যেই ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করে পাকিস্তানি বাহিনী। তার আগেই বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে তারবার্তা পাঠিয়ে যান তিনি, স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার হয় ইপিআরের ওয়্যারলেস বার্তায়।
মরণপণ লড়াই চলে পরের নয়টি মাস। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ধরা দেয় বিজয়। বাঙালির আত্মত্যাগ পরিণতি পায় বিশ্ব মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামের এক নতুন রাষ্ট্রের অবয়বে।