ফিলিস্তিনে যখন ইসরাইলি বর্বরোচিত হামলা চলে তখন আরব বিশ্বের মুসলিমদের মনে পড়ে এক মহানায়কের নাম।
আরবদের দৃঢ় বিশ্বাস, যদি তিনি বেঁচে থাকতেন তাহলে ইসরাইল এসব জঙ্গী কর্মকাণ্ড করার দুঃসাহসও দেখাতে পারত না। হয়তো একাই লড়তেন ইসরাইল ও তার মিত্রদের সঙ্গে। জয়-পরাজয়ের হিসাব না কোষেই দীপ্ত কণ্ঠে দিতেন সতর্কবার্তা।
আরবদের হৃদয়ে অবস্থান করা সেই মহামানবের নাম বাদশাহ ফয়সাল। জায়নবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বীরপুরুষের মতো লড়ে গেছেন যারা, তাদের অন্যতম ছিলেন সৌদি রাজপরিবারের জৈষ্ঠ্য এই সদস্য।
আত্মমর্যাদা সাহসিকতা ও বিচক্ষণতায় তিনি ছিলেন সবার থেকে আলাদা। বিশ্ব ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো থেকে হুমকি ধামকি পাওয়ার পরও কখনো তার মনে ভয়ের লেশমাত্র উঁকি দেয়নি। এমনকি বয়োবৃদ্ধ বাদশাহকে কখনো দুর্বল মনে হয় নি। তার কথা শুনে মনে হতো তিনি তরুণ বয়সেই সাহসী যুবক।
সবসময় প্রতিবাদ করে গেছেন ইহুদিদের বিপথগামী দল জায়নবাদীদের মতাদর্শ ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রশ্নে কখনো আপসের টেবিলে বসানো যায়নি তাকে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাই ছিল তার একমাত্র চাওয়া ও আপস। তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী একজন রাষ্ট্রপ্রধান বা বাদশা। তার শাসনকাল অর্থাৎ ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৫ এই সময়টা ছিল আরববিশ্বের প্রকৃত স্বর্ণযুগ।
বাদশাহ হিসেবে তিনি দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং আধুনিকীকরণ ও সংস্কারে সফল হন। তার বৈদেশিক নীতির মূল দিক ছিল প্যান ইসলামিজম, কমিউনিজম বিরোধিতা, ফিলিস্তিনি দাবির সমর্থন।
একটি সেমিনারে আরব জাতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, আমরা কিসের অপেক্ষা করছি। আমরা কি পরাশক্তিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি?, কিন্তু তারা কোথায়?
হে পৃথিবীর মুসলিম সম্প্রদায়,বাইতুল মুকাদ্দাস তোমাদের আহবান করছে। তোমাদের সাহায্য চাচ্ছে। তারা আশায় বুক বেঁধে আছে, তোমরা তাদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করবে।
কি এমন জিনিস যেটা আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে? আমরা কি মৃত্যুকে ভয় পাচ্ছি? আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গ করে সেখানে মৃত্যুবরণ করাটা কি গৌরব ও সম্মানের বিষয় নয়?
এই বক্তব্য প্রদানের কিছুদিন পরেই রাজপরিবারের আরেক সদস্যের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন অদম্য সাহসী ও আপোষহীন এই নেতা। কাকতালীয় ভাবে তারও নাম ছিল ফয়সাল।
প্রভাবশালী কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে বাদশাহ ফয়সালের হত্যার পিছনে সরাসরি যুক্ত ছিল ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। তার মৃত্যুর মাধ্যমেই মূলত ইহুদিবাদী আধিপত্য বিস্তারের অন্তরায় দূর করা হয়েছিল।
এরপর যত শাসকই জন্মেছেন আরব ভূখণ্ডে, তাদের অধিকাংশই আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন।
আবার কেউ কেউ কিছুটা কৌশলী হয়ে অন্যান্য পরাশক্তিগুলোর সাহায্যে নিজ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও অর্থনৈতিক চাকা ঠিক রেখেছেন।
কিন্তু হাল জামানার অবস্থা সবারই জানা। ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বাহান্নোটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের মধ্যে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে পাঁচটি মুসলিম রাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বীকৃতির তালিকা থেকে বাদ পড়া মুসলিম রাষ্ট্রগুলো গোপনে গোপনে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যা হয়তো বাদশা ফয়সাল বেঁচে থাকলে কল্পনা করাও কঠিন হতো।