সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা। তবে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। লকডাউনের সাতদিন সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে গণজমায়েত করে কোনও প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন না প্রার্থীরা। কিন্তু লকডাউন বাড়লে এবং প্রচার-প্রচারণা এক সপ্তাহের বেশি সময় বন্ধ থাকলে নির্বাচন পেছানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ইসরাইল হোসেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন অফিস থেকে আমাদের কাছে একটি পরিপত্র এসেছে। পরিপত্র অনুযায়ী ১ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে গণজমায়েত করে কোনও ধরনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা চালানো যাবে না। পরবর্তী নির্দেশনা আসার পর করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এক সপ্তাহের অধিক সর্বাত্মক লকডাউন হলে নির্বাচন পেছানোর আভাস দিয়ে তিনি বলেন, লকডাউন এক সপ্তাহ হলে নির্বাচনে হয়তো কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু এক সপ্তাহের অধিক হলে বিষয়টি নিয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, গত ১১ মার্চ সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। আগামী ২৮ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী (মোটরগাড়ি), বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (ডাব) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৪৯ হাজার ৮৭৩ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৭ হাজার ৩৯০ জন এবং নারী ভোট রয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৪৮৩টি। তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি ও ভোট কক্ষ হচ্ছে ৮৭৪টি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন এক লাখ ৭৬ হাজার ৫৮৭ ভোট এবং ধানের শীষ প্রতীকে শফি আহমেদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ২৮৮ ভোট। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯৭ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপির প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৫৪ হাজার ৯৫৫ ভোট। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৫ হাজার ৯৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী। এ নির্বাচনে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৩৪২ ভোট। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এম এ মুকিত খান লাঙ্গল প্রতীকে ২৬ হাজার ৬৫৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এ সময় নৌকা প্রতীকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ১৬৮ ভোট। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আতিকুর রহমান আতিক। নৌকা প্রতীকে তিনি ১৯ হাজার ৫৭ ভোট পান। তাকে হারিয়ে জাতীয় পার্টির এম এ মুকিত খান লাঙ্গল প্রতীকে ৩৩ হাজার ৪১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।