সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড়ের মধ্যেই বেরিয়ে আসছে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা। এসব ঘটনার আসামিরা এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও এবার সিলেটজুড়ে তীব্র আন্দোলনের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষকদের গ্রেফতার করছে।
শনিবার ও রোববার পৃথক ধর্ষণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
এদিকে স্কুলছাত্রী ধর্ষক ছাত্রলীগ কর্মী রাকিব হোসেন মিজুকে আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।
জানা যায়, সিলেটে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে রোববার ভোরে একজনকে সুনামগঞ্জের আক্তাপাড়া এলাকা থেকে ও অপরজনকে শহরতলির কালাপাহাড় এলাকা থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করে এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- জালালাবাদ থানা এলাকার রায়েরগাঁওয়ের নাসির উদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন (২২) ও একই এলাকার তজম্মুল আলীর ছেলে মো. এখলাছ মিয়া (২০)।
এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর সিলেটের শহরতলির রায়েরগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি ছাত্রীকে (১২) তুলে নিয়ে গিয়ে ‘ধর্ষণ’ করে জসিম ও নাসির। পরদিন স্থানীয় মুরব্বি আশিক আলী, হারুন, ইমদাদ আলী ও জালাল ওই স্কুলছাত্রীর পিতাকে ডেকে নিয়ে মামলা করতে নিষেধ করেন এবং বিষয়টি তারা সালিশের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন।
ঘটনার ৬ দিন পর কোনো বিচার না পেয়ে স্কুলছাত্রীর পিতা জালালাবাদ থানায় দুজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে মামলা দায়েরের ১৯ দিন পর স্থানীয় চার মুরব্বি ও দুই আসামিকে গ্রেফতার করে এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশ। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় মামলা করতে নিষেধকারী চার মুরব্বিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন জালালাবাদ থানার ওসি অকিল উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এরা মামলায় অভিযুক্ত নয়। তারা বিষয়টি সালিশে সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তাদের সহযোগিতায় আমরা আসামিদের গ্রেফতার করেছি। পরে তাদের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।
২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ লামাপাড়ার শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তৃতীয়তলার পরিত্যক্ত কক্ষে ১৬ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ করে স্থানীয় যুবক মোহাম্মদ আলী (১৮)। এ ঘটনায় ৩ অক্টোবর ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে এসএমপির শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে গত শনিবার লামাপাড়া থেকে পুলিশ মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করে।
মোহাম্মদ আলী লামাপাড়ার সাকু মিয়ার কলোনির বাসিন্দা সোহেল মিয়ার ছেলে। তাকে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে সে ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। পরে আলীকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।
অপরদিকে সিলেট নগরীর দাড়িয়াপাড়ায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে কিশোরী (১৩) ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী রাকিব হোসেন মিজুর (২২) তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। রোববার বিকাল ৩টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিজুকে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যা ব-৯। রোববার তাকে এসএমপির কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার পর বিকালে মিজুকে আদালতে নেয়া হয়।
উৎসঃ যুগান্তর