আবদুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও সে অনুযায়ী নাগরিক সুবিধা পাচ্ছে না পৌরবাসী। খানাখন্দে ভরা পৌর এলাকার রাস্তাঘাট। সুষ্ঠু ড্রেনেজ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে যায় শহরের প্রধান সড়কসহ পাকা সড়ক, বসতবাড়ির আঙিনা এমনকি মানুষের থাকার ঘরটিও। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার কিছু এলাকা গত দুই মাস যাবৎ জলাবদ্ধ ছিল। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নতুন করে পৌর শহরের আরও নতুন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর একদিকে করোনা আর অপরদিকে সৃষ্ট জলবদ্ধতার দূষিত পানি থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ভয়ে থমকে গেছে পৌরবাসীর জীবন।
সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এর মধ্যে আরসিসি ড্রেন রয়েছে ১০.৭৯ কিলোমিটার, পাকা ড্রেন রয়েছে ৫৭.৫০ কিলোমিটার এবং কাঁচা ড্রেন রয়েছে ১১৫.২৪ কিলোমিটার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিলো তা থেকে ড্রেন মেরামত ও সংস্কারের জন্য ১১ লাখ ২৫ হাজার ৭শ ৬৩ টাকা, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকার বাজেটের ভিতরে ৩০ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬০ কোটি ২৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৪ টাকার বাজেটের ভিতরে ২০ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৬৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকার বাজেটের ভিতরে মোটা অংকের টাকা ড্রেন মেরামত ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়াও প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকা ড্রেন মেরামত ও সংস্কারে বরাদ্দ দেখানো হলেও দৃশ্যমান কোন কাজ হচ্ছে না।
সরেজমিনে পৌর এলাকার ইটাগাছা, কামালনগর, বদ্দিপুর, পুরাতন সাতক্ষীরা, ঘুড্ডিরডাঙ্গি, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, কাটিয়া, ঝুটিতলা, লস্করপাড়া, তালতলা, মিলবাজার, গোপিনাথপুর সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায় এসমস্ত এলাকায় পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা নেই।
তবে সরকারি খাল ও পানি নিষ্কাশনের পথ দখল করে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে সামান্য বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল, নদী ভরাট অপরদিকে কতিয়র পৌরবাসী ও ঘেরমালিকদের দায়িত্বহীনতার কারনে আটকে গেছে সাতক্ষীরা পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের পথ। এতেকরে বছরের প্রায় অর্ধেক সময়েরও বেশিধরে পৌরসভার অধিকাংশ এলাকাগুলো জলাবদ্ধতায় থাকে। এর ফলে জলাবদ্ধতার শিকার হাজারো পরিবারের নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।
এসময় স্থানীয়রা জানান, ইটাগাছার পশ্চিমাংশে কামালনগরের রজব আলী, পলাশপোল বৌ-বাজার এলাকার লিটন হোসেন, ইটাগাছায় শামসুর মাস্টারের জামাতা ফজলুল করিম, সাবেক ব্যাংকার আব্দুর রহিমসহ অনেকে রাস্তার জমি দখল করে ঘেরের বাধঁ তৈরী করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে রেখেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছর সাতক্ষীরায় ৮৫৯ জন ব্যক্তি ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের ভিতরে মারা যায় ৫জন। তবে এবছরের শুরুতে ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়েছিলো ১ জন। তবে করোনা ভাইরাসের কারনে থমকে গেছে চিকিৎসাব্যবস্থা। একারণে দ্রুত সময়ের ভিতরে যদি পৌর এলাকার এসমস্ত দূষিত পানি নিষ্কাশন করা না যায় তাহলে কয়েক হাজার মানুষ ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি ডেঙ্গুরোগ বিস্তার করে তাহলে একদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আর অপরদিকে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমসিম খেতে হবে ডাক্তারদের।
এবিষয়ে পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতির সাথে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।