আব্দুল ওয়াহাব, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক সুদ কারবারি মহিলার খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার। এমনকি মাত্র ৫০ হাজার টাকার বিপরীতে ৩ লক্ষ টাকা পরিশোধের পরেও এক পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো ১৩ লক্ষ টাকার মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে এই মহিলার বিরুদ্ধে। ঐ মহিলা উপজেলার ছদাহা ইউপির আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় মহিলা আ’লীগের নেত্রী।
এ বিষয়ে মামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। শনিবার (১২ অক্টোবর) উপজেলার একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য মোহাইমিনুল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রতিটি মানুষের চলমান জীবনে আর্থিক সংকট থাকে। আমরা আর্থিক সংকটে পড়ে বিভিন্ন সময়ে রেহেনা আক্তারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। টাকা নেওয়ার সময় প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে প্রতি ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে একটি তিনশত টাকা মূল্যের খালি স্টাম্প ও একটি করে খালি চেক দিতে হয়েছে। আমাদের টাকার একান্ত প্রয়োজন ছিল তাই আমরা প্রত্যেকেই সরল বিশ্বাসে তাকে টাকার বিনিময়ে স্টাম্প এবং খালি চেক প্রদান করেছি। যদিও আমাদের মাঝে মৌখিক চুক্তি ছিল টাকা ফেরত দিলে আমাদের স্টাম্প ও চেক ফেরত দেবেন রেহেনা আক্তার। কিন্তু তিনি টাকা নিয়ে আমাদের স্টাম্প এবং চেক ফেরত দিবে বলে উল্টো তার কয়েকগুন বেশী টাকা দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করে দেন। পরবর্তীতে মামলা প্রত্যাহার করবেন বলেও একাধিকবার টাকা নেন। আমরা প্রতিবার তাকে বিশ্বাস করেছি এই ভেবে যে, তিনি টাকা নিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে অন্তত আমাদেরকে তার হয়রানি থেকে মুক্তি দিবেন। কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো এখন আমাদেরকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছেন এবং আরো অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাইমিন আরো বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগীদের একজন হুমায়ুন কবির। তিনি গত ২০১৭ সালে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। বিনিময়ে রেহেনা আক্তার তার কাছ থেকে একটি খালি স্টাম্প এবং একটি খালি চেক নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উক্ত টাকার বিনিময়ে প্রতি মাসে রেহেনাকে ২ হাজার ৫ শত টাকা করে প্রতি বছরে ৩০ হাজার এবং ৪ বছরে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ৫০ হাজারের বিনিময়ে সুদ আদায় করেন। উল্লেখ্য যে, কয়েকমাস পরে মূল ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে চাইলেও সে টাকা ফেরত নেয়নি। বরং তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিভিন্ন ক্ষমতাসীন নেতাদের দিয়ে হুমকি ধমকি প্রদান করেন এবং সুদ দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তীতে করোনাকালীন সময়ে সুদ পরিশোধ করতে অপারগ হলে রেহেনা আক্তার বিভিন্ন হুমকি ধমকি দিয়ে হুমায়ুন কবিরের চেক দিয়ে আদালতে তার বিরুদ্ধে আদালতে ১৩ লক্ষ টাকার একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
একইভাবে নুরুন্নাহারে বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ টাকার মামলা করেন এবং আরো অনেক পরিবারের বিরুদ্ধে ১০ লক্ষ, ১৫ লক্ষ, ২০ লক্ষ টাকা করে মামলা করেছেন। এছাড়াও নিয়মিত হয়রানি করে যাচ্ছেন কহিনুর আক্তার, নুরুন্নাহার, ওয়াহিদুর রহমানে, সাহাবুদ্দীন, আরিফুল ইসলাম, ফরিদ, ছফুরা বেগম, রফিক, এহসানুল কবির সহ অন্তত অর্ধশত পরিবারকে।
এই আবস্থায় আমরা এই মহিলার এমন অত্যাচার, মামলা ও হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে সাংবাদিকগণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় সকল সংস্থার কাছ থেকে সহযোগীতা কামনা করছি।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রেহেনা আক্তারকে ফোন দিলে তিনি কথা বলেননি৷ কিন্তু তার মেয়ে বলেন, আমার মা চাকুরি করে। তিনি মধ্যস্থতা করেছেন মাত্র। তাছাড়া ছয় বছর ধরে আদালতে মামলা চলমান আছে। এই মুহূর্তে আমরাতো কিছু করতে পারবনা। যদি কেউ মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়ায় তাদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করব।