স্পেনে অপেশাদার দুই ডুবুরি সমুদ্রগর্ভে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ ‘গুপ্তধন’-এর সন্ধান পেয়ে গেলেন।
অর্ধশতাধিক ঝকঝকে স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার করেছেন ওই ডুবুরিরা। তবে সেগুলোর ঐতিহাসিক কদর তাদের বস্তুমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। খবর সিএনএনের।
স্পেনের পূর্ব উপকূলে ইবিজা থেকে সামান্য দূরে ভূমধ্যসাগরের লাগোয়া প্রাচীন শহর জাবিয়া। একসময় রোমের উপনিবেশ ছিল এই শহর। জাবিয়াতেই দুই ডুবুরি ‘গুপ্তধন’ খুঁজে পেয়েছেন।
স্বর্ণমুদ্রাগুলো অতিপ্রাচীন। কম করে দেড় হাজার বছরের পুরনো। রোমের বিভিন্ন সম্রাটের আমলে তৈরি করা হয়েছিল সেগুলো। ইতিহাসবিদরা জানান, এ যাবৎ যত রোমান মুদ্রা উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যে এই সংগ্রহটিই অন্যতম।
ডুবুরিরা প্রথমে নুড়ি পাথরের নিচে চাপা পড়ে থাকা আটটি স্বর্ণমুদ্রা পেয়েছিলেন। পরে তাদের কথায় ওই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে স্পেনের প্রত্নতত্ত্ববিদরা আরও ৪৫টি স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার করেন।
সমুদ্রের তলা থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণমুদ্রার ওই সংগ্রহ দেখে ইতিহাসবিদরা উচ্ছ্বসিত। এক বিবৃতিতে স্পেনের অ্যালিসান্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সেই উচ্ছ্বাসের কথা বেশ ফলাও করে জানিয়েছেন।
উচ্ছ্বাসের কারণ মুদ্রাগুলোর বর্তমান অবস্থা। সেগুলোতে সময়ের ছাপ তো পড়েইনি, বরং দেড় হাজার বছরের পুরনো মুদ্রা এখনও বেশ ঝকঝকে। এক গবেষকের কথায়— দেখে মনে হবে যেন কালই তৈরি হয়ে এলো।
এতে দুটি সুবিধা হয়েছে। প্রথমত মুদ্রায় খোদাই করা রোমান সম্রাটদের ছবি এবং লিপি স্পষ্ট বোঝা গেছে। দ্বিতীয়ত তা থেকে মুদ্রাগুলোর সময়কাল সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণাও পাওয়া গেছে।
গবেষকদের ধারণা, মুদ্রাগুলো খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল বলেই এত বছর ধরে পানির তলায় থেকেও নষ্ট হয়নি।
ঠিক কোন সময়ে মুদ্রাগুলো তৈরি হয়েছিল, তা জানতে পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে জানা গেছে— মুদ্রাগুলো চতুর্থ শতাব্দীর শেষ থেকে পঞ্চম শতাব্দীর গোড়ার দিকের মধ্যে সময়ে তৈরি।
মোট ৫৩টি মুদ্রা পাওয়া গিছে। তবে এর মধ্যে ৫২টির সময়কাল জানতে পেরেছেন অ্যালিসান্টের গবেষকরা। একটি মুদ্রায় খোদাই করা সম্রাটের মুখ বা লিপি কেউ ঘষে তুলে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
এই ৫২টি মুদ্রার তিনটি সবচেয়ে বেশি পুরনো। সেগুলো রোমের সম্রাট প্রথম ভ্যালেন্টিনিয়ানের আমলের। এ ছাড়া দ্বিতীয় ভ্যালেন্টিনিয়ানের আমলের সাতটি, প্রথম থিওডোসিয়াসের আমলের ১৫টি, আর্কাডিয়াসের রাজত্বকালের ১৭টি এবং অনোরিয়াসের সময়ের ১০টি মুদ্রা রয়েছে।
মুদ্রাগুলোর সঙ্গে বেশ কয়েকটি তামার পেরেকও উদ্ধার করেছিলেন ডুবুরিরা। তবে গবেষকদের ধারণা— সেটি হয়তো কোনো সিন্দুকের। যাতে স্বর্ণমুদ্রাগুলো ভরে কেউ সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলেন, পরে এসে উদ্ধার করবেন বলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরতে পারেননি।
অ্যালিসান্টের অধ্যাপক জেমি মলিনা ভিডালের নেতৃত্বে জাবিয়ার সমুদ্রের নিচে তল্লাশি চালিয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্ববিদরা। মলিনা জানিয়েছেন, স্বর্ণমুদ্রাগুলো তাদের সামনে ইতিহাসের একটি অজানা দরজা খুলে দিয়েছে। বেশ কিছু অজানা সূত্রও জোড়া লাগানো যাবে তা দিয়ে।