চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নে আবারও পদ্মা-মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। উত্তরাঞ্চল থেকে নেমে আসা বন্যার পানির প্রবল স্রোতে গত কয়েক দিন ধরে নদী ভাঙন তীব্র হয়েছে। ভাঙনে উদ্বোধনের আগেই নদীগর্ভে বীলিন হওয়ার পথে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার। মাত্র একমাস আগে ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এছাড়াও গত কয়েক দিনের ভাঙনে প্রায় ২ শতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আরও প্রায় ৫০০ বাড়ি ভাঙনের হুমকিতে।
স্থানীয়রা বলেন, জোয়ার শেষে ভাটার সময়ে ভাঙন শুরু হয়। গত ৩০ বছরের মধ্যে এবারই ভাঙনের ভয়াবহতা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। কারণ, এবছর পাশ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ এলাকায় মেঘনার ভাঙন রোধে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে তার পানি প্রবাহের মুখটি দেওয়া হয়েছে রাজরাজেশ্বরের দিকে। ফলে ওই জেলার দেয়া বাঁধের ধাক্কা খাওয়া স্রোত ঝুঁকিপূর্ণভাবে এখানকার পাড়ে আঘাত হানছে।
তারা বলেন, আমরা কোনও ত্রাণ চাই না। আমরা চাই আমাদের ভিটেমাটি রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
সাইক্লোন শেল্টারের ঠিকাদার প্রতিনিধি ও ইউপি সদস্য পারভেজ গাজী রনি বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রায় ৭/৮ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। যার ফলে এখানকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এবং ইউনিয়নবাসীর কথা চিন্তা করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখানে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যায়ে তিন তলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার করে দিয়েছেন। এই ভবনটির সাইড সিলেকশনের সময় নদী এখান থেকে বহু দূরে ছিল। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে আমরা খুব দ্রুততার সঙ্গে ভবনটির নির্মাণ করি। একমাস আগে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করেছি।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, উজান থেকে প্রবল বেগে আসা পানি রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চর এলাকায় মেঘনা ও পদ্মা নদীর মিলনস্থলে প্রচণ্ড ঢেউ এবং ঘূর্ণিস্রোতের সৃষ্টি করে। যার কারণে নদী বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। গত ১০ দিনের ভাঙনে ইউনিয়নের রাজারচর, জাহাজমারা গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। এখন পদ্মার ভাঙন চলছে লক্ষ্মীপুরচর গ্রামে। গত কয়েক দিনের ভাঙনের কারণে দুই শতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ৫০০ বাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী বলেন, আসলে ওই এলাকার ভাঙন ঠেকানো অনেকটা অসম্ভব। কারণ, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের একপাশে পদ্মা আরেক পাশে মেঘনা। এ এলাকাটি দু’টি নদীরই ভাঙনের শিকার। এখানে ভাঙন প্রতিরোধে কোনও কাজও করা সম্ভব নয়।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, ওই এলাকাটি খুবই ভাঙনপ্রবণ। পদ্মা-মেঘনার মতো দু’টি বড় নদী ভাঙছে। আমরা ওই এলাকার ভাঙন পরিস্থিতি দেখবো। তারপর করণীয় থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।