বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোন দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। বিদেশীরাও বলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে তা মানা হবে না। এজন্য র্যাবকে তারা স্যাংশন দিয়েছে। ফয়সালা হবে রাজপথে। তাই সামনের আন্দোলনকে তরুণদের এগিয়ে নিতে হবে। তরুণরা জেগে উঠুন।
শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকারকে বিদায় করার জন্যই রোদ-বৃষ্টিতে আপনারা ভিজছেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে নতুন একটা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। আজ থেকে ১১ বছর আগে এক মায়ের ২ ছেলে গুম হয়ে গেছে। এরকম ৭০০ এর উপরে গুম হয়েছে। ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকার মায়েদের সন্তান হারা, স্ত্রীদের স্বামী হারা করিয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ সরকার ১৪ বছর ধরে জনগণের উপর চেপে বসে আছে।
তিনি আরও বলেন, একটি নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের দাবি ছিল। ৪টি নির্বাচন হলো তত্বাবধায়কে, সবাই মেনেও নিলো। কিন্তু তারা এসে নিজেদের অধীনে নির্বাচন দিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ।
তারুণ্যের সমাবেশের প্রধান বক্তা যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, আমরা ৪ কোটি ৭০ লাখ তরুণ ভোটারদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ক্ষমতা নয়, ভোটের জন্য লড়াই করছি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যাকারী দল। তারা দিনের ভোট রাতে করে। এ সরকারের পতনে রাজপথে ফয়সালা হবে।
সমাবেশের বিশেষ বক্তা স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, ঘরে ঘরে চাকরি, বিনামূল্যে সার দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়েছে এই মাফিয়া সরকার। তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত পথে ধাবিত হতে হবে।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, মহানগর বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান ফারুক, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, মাসুদ হাসান মামুন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম তসলিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জনি, ছাত্রদলের নগর সভাপতি রেজাউল ইসলাম রনি প্রমুখ।
এর আগে, দুপুরের আগ থেকে বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল আসতে শুরু করে। বিশেষ করে নদীপথে শত শত নেতাকর্মী সমাবেশ স্থলে আসে। দুই লাখ তরুণ ভোটার সমাগমের টার্গেটে এই সমাবেশ হয়েছে। ৯.৪৭ একরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাঁচ ভাগের দুই ভাগ বাদ দিয়ে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে মাঠের অর্ধেকেরও বেশি জায়গা ছিলো কার্যত ফাঁকা। এছাড়া খানাখন্দসহ তীব্র রোদের কারণে তারা মাঠের মধ্যে থাকতে না পেরে পার্শ্ববর্তী ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান নেন।
সমাবেশ উপলক্ষে অধিকাংশ নেতারা শুক্রবার থেকেই বরিশাল নগরীতে প্রবেশ করে অবস্থান করেন। শনিবার বেলা ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নগরীসহ বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জেলা উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানারসহ হরেক রঙের ক্যাপ পরে মাঠে অবস্থান নেন। তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ সমাবেশ স্থলে ব্যাপক পুলিশী তৎপরতা ছিলো। এছাড়া সন্দেহজনক ব্যক্তিদের তল্লাসিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে মেট্রোপলিটন পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
এদিকে বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বরিশালে শান্তি সমাবেশ করেছে বরিশাল জেলা এবং মহানগর যুবলীগ। বিকেল চারটায় নগর ভবনের সামনে এই শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর যুবলীগের সভাপতি মো. নিজামুল ইসলাম নিজামের সভাপতিত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বদিউল আলম।