শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে অংশ নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহাবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুকসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার একটা চেষ্টা করতে পারি। তবে সবকিছু নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতি কেমন হয়। বিশ্বজুড়ে করোনা প্রকোপ আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের এখানের বিশেষজ্ঞরা বলছেন শীতে আমাদের এখানে করোনা বাড়তে পারে সে কারণে আমাদের ঝুঁকি থাকছে। কিন্তু তারপরও যারা আগামী বছরে এস এস সি বা এইচ এস সি পরীক্ষা দিবেন তাদের কথা মাথায় রেখে খুবই সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যঝুঁকি যেন একেবারেই যেন না থাকে এরকম ব্যবস্থা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে কি করা যায় এরকম একটা চিন্তা ভাবনা আমরা করছি। যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয় তাহলে আমরা সে ধরনের সিদ্ধান্তে যাবো।
তিনি আরও বলেন, এবার আমাদের বই তৈরি থাকবে। প্রতিবার আমরা যে আয়োজন করে বই বিতরণ করি সেটা এই পরিস্থিতেত আমরা এবার করতে পারবো না। তাই আমরা বিকল্প চিন্তা করে কিভাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া যায় সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করবো।
ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলছি সেটা কিন্তু এই শিক্ষা বর্ষের জন্যেই। এবং বিশেষ করে আমাদের মাথায় আছে যে যারা আগামী বছর ২০২১ সালে যারা এইচ এস সি বা এস এস সি পরিক্ষার্থী। এ বছর যাদের এইচ এস সি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তারা কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ করেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তাদের পরীক্ষা বন্ধ হয়েছিলো। তাই তারা তাদের পড়াশুনাটা শেষ করেছিল। কিন্তু আগামী বছর যারা এইচ এস সি বা এস এস সি দিবে তাদের পড়াশুনায় কিছুটা হলেও ব্যাঘাত হয়েছে। এবং তারা ক্লাস করতে পারেনি প্রায় ৮ মাস। সে কারণে তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারিত পরীক্ষার আগে তাদের যদি ভালোভাবে একটু সময় দেওয়া যায় তাহলে তাদের যে নির্ধারিত সিলেবাস সেটা সম্পন্ন করতে পারবে।
তবে অন্যদের ব্যাপারে আমরাও চিন্তা করতে করছি। সবকিছু বিবেচনা করেই, স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা মাথায় নিয়েই আমরা একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিবো।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের ৫টি পরীক্ষা হয়ে গেছে এবং তাদের আর ৩/৪টি পরীক্ষা বাকি। তাদের কেউ কেউ আমাদের অনুরোধ করছেন যে আমরা অটোপাশ চাইন আমাদের ৫টি পরীক্ষার ভিত্তিতে আমাদের বাকি ৪টি পরীক্ষার নাম্বার দিয়ে দিন। আমাদের ক্ষেত্রে এইচ এস সি বা এস এস সি তে অপেক্ষা করার আর সুযোগ ছিল না এই জন্য তাদের আমরা আগের যে দুটো পাবলিক পরীক্ষা দিয়েছে (এস,এস,সি বা জে,এস,সি) সেগুলোর ভিত্তিতে আমরা মূল্যায়ন করার সিদ্ধান দিয়েছি।
কিন্তু যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন বা যারা পলিটেকনিক এ আছে তাদের বিষয়টি কিন্তু ভিন্ন। কারণ তারা চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েই তাদের কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। তাই তাদের পরীক্ষা সঠিক ভিত্তিতে না হয়ে মূল্যায়ন হয় তাহলে তাদের চাকরীর ক্ষেত্রে বা কর্মস্থলে সমস্যা হতে পারে। এইচ এস সি পরীক্ষার পরে তারা আরও পড়াশুনা করবে কিন্তু যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ বর্ষে আছে তারা তো এই পরীক্ষা শেষ করেই কর্ম জীবনে যাবে তাই এই জায়গায় আসলে পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন করা সঠিক হবে না। আমরা তাদের পরীক্ষা আস্তে আস্তে নিয়ে নিতে পারবো সে ব্যাপারে আমরা ভাবছি এবং আলোচনা করছি।
গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফা ছুটি বাড়ানোর পর ৩১ অক্টোবর ছুটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ছুটি শেষ হওয়ার আগেই আবারো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির সময় বাড়লো।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে প্রাথমিকের সমাপনী, জেএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষাও।