বিমানবন্দরে বিদেশগামীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ঠিকভাবে হচ্ছে না; বিভিন্ন দেশে পৌঁছনোর পর যাত্রীদের কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়ছে বাংলাদেশ।
ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশগামী যাত্রীদের শুধু বাহ্যিক উপসর্গ এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা ছাড়া কিছু করে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে বিমানবন্দরে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা উচিৎ। নইলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়বে দেশ।
করোনাভাইরাস মহামারীর রূপ নিলে সারাবিশ্বেই আকাশপথ সীমিত হয়ে পড়ে। গত মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করা হয়।
আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ১৫ জুন উঠে গেলেও পরিবর্তিত বিশ্বে বিমানযাত্রীদের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে হচ্ছে।
দেশেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বেঁধে দেওয়া স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মেনেই কাজ চালাতে হচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলোকে।
কিন্তু এর মধ্যেই জুনের মাঝামাঝিতে ঢাকা থেকে গুয়াংঝুগামী চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ১৭ জন যাত্রী যাওয়ার পর তাদের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়।
এরপর চায়না সাদার্ন এয়ারলাইন্সকে আগামী চার সপ্তাহ বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় চীন সরকার।
এছাড়া এপ্রিলে বাংলাদেশ বিমানের একটি চার্টার ফ্লাইট জাপান গেলে সেখানের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দুজন যাত্রীর করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর থেকে সেই দেশে বিমানের চার্টার ফ্লাইট পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাপান সরকার।
এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের উপদেষ্টা ও বিমান বাহিনীর সাবেক উইং কমান্ডার এটিএম নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দেখলাম জাপান ও চীন আমাদের এখান থেকে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে বা এখান থেকে তাদের দেশে যাত্রী নেবে না। অবশ্যই বিমানবন্দরে বহির্গামী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাটা করা উচিত।”
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে বলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষাটি তারা করান না।
“প্যাসেঞ্জার যে দেশে যাচ্ছে সেই দেশের কী রিকোয়ারমেন্ট, কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট লাগবে কি না, ভিসা আছে কি না- এই বিষয়গুলো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দেখে না। এগুলো এয়ালাইন্স ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরীক্ষিত হয়। সুতরাং কেউ যদি কোভিড-১৯ নিয়ে যায়, সেটা দেখার দায়িত্ব কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের না।”
তবে কোনো যাত্রীর যদি শরীরে তাপমাত্রা বেশি হয় কিংবা সর্দি-কাশি থাকে, তাহলে তাকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে জানান তৌহিদ।
চীন বা জাপানে যারা গেলেন তাহলে তাদের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “অবশ্যই। শারীরিক তাপমাত্রা বেশি থাকলে তো আমরা কাউকে বিমানবন্দরে ঢুকতেই দিই না। বিমানবন্দরে ঢোকার সময় আমরা তো সবার তাপমাত্রা পরীক্ষা করি। এটা কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করে না।
“এখন কেউ যদি সিমটম ছাড়া চলে যায় বা সিমটম ছাড়া ভ্রমণ করে, তাহলে সেটা দেখার কোনো মেকানিজম আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাখেনি।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা ছাড়াও অন্যান্য উপসর্গ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন বিমানবন্দরের পরিচালক।
তবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাদ দাবি করছেন, বহির্গামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিমানবন্দরে বহির্গামী যাত্রীদের কারও শরীরের তাপমাত্রা সন্দেহজনক মনে হলে সিভিল এভিয়েশন আমাদের জানায়। এরপর সেখানে আমরা তার প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি।”
চীন ও জাপানগামী ওই যাত্রীরা কীভাবে করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েও বিমানবন্দর পার হল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়েছিল বলে ফ্লাই করার অনুমতি পেয়েছিল।
“কারণ এত অল্প সময়ের মধ্যে কোনো সার্টিফিকেট ভেরিফাই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না।”
এটিএম নজরুল বলেন, “এখান থেকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে যাচ্ছেন, অন্য দেশে গিয়ে পজেটিভ হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমাদের পরীক্ষাগুলোতে কিছুটা কালোবাজারি হচ্ছে।
“এটা রিএ্যাকজাম করা উচিত। পাশাপাশি র্যাপিড কিট নিয়ে পরীক্ষা করে এন্টিবডি রয়েছে কি না, সেটাও দেখা উচিত।”
বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে জাপান যাওয়া দুই যাত্রীর করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়া নিয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকাব্বির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি কোনোক্রমেই সত্য নয়।
“আমি টেলিফোনে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলব না। আপনি সামনাসামনি আসেন কথা বলবেন। কারণ এখানে অনেক মিস ইনফরমেশন, মিসলিডিং ইনফরমেশন হচ্ছে। এবং জাপান এ্যাম্বাসি গত শুক্রবারে এই বিষয়ে প্রেসরিলিজও দিয়েছে। সরি, আমি টেলিফোনে এই বিষয়ে কথা বলব না।”
বেবিচক বলেছে, ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সব এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব ও পরিচ্ছন্নতার বিধি মেনে চলতে হবে। এয়ারক্রাফটের ধারণক্ষমতার ৭৫ শতাংশের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। যাত্রীদের বসার ক্ষেত্রে দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রীদের মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস দিতে হবে। আসা যাওয়ার আগে এয়ারক্রাফট ‘স্যানিটাইজ’ করতে হবে।
বিমানের জনসংযোগ শাখার উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই তারা ফ্লাইট পরিচালনা করছেন।
মহামারীকালে সুরক্ষার বন্দোবস্তু নিয়ে তিনি বলেন, “যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে বিমান সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রীদের বোর্ডিং কার্ড ইস্যুর সময় তাদের বিমানের পক্ষ থেকে হাইজিন কিট দেওয়া হয়, যেখানে ফেইস মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস থাকে।”
এরপর বিমানে উঠার পর যাত্রীদের আসন বণ্টনও দূরত্ব মেনে করা হয় জানিয়ে তাহেরা বলেন, “এখন আমরা যাত্রীদের খাবার ট্রেতে করে না দিয়ে বক্স সার্ভিস চালু করেছি। খাবার মেন্যুতে কোনো বেভারেজ না রেখে পানি দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ড্রাই খাবার দেওয়া হচ্ছে।”
এয়ারক্রাফটে দায়িত্বরত ক্রুদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ের সময়ও দায়িত্বরতরা হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পরছেন বলে জানান এই বিমান কর্মকর্তা। যাত্রীদের ব্যাগেজ এয়ারক্রাফটে ওঠানোর সময়ও দায়িত্বপালনকারীরা পিপিই পরছেন।
উৎসঃ বাংলা নিউজ২৪ ডট কম