বগুড়ায় শাশুড়ির শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মামলায় জামাতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানা ও তার স্ত্রীকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন আদালত। রোববার (২৫ অক্টোবর) তাদের গ্রেফতার করা হয়। বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল আওয়াল আদালতে আনোয়ার হোসেন রানা এবং তার স্ত্রী জামিনের আবেদন করলে ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন।
এর আগে গত ৫ অক্টোবর আনোয়ার হোসেন রানা তার স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে শাশুড়ি দেলোয়ারা বেগম। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্বামীর মৃত্যুর পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরি পরিচালনা করছিলেন তিনি। অংশীদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা শহরের শাকপালা ও চারমাথা এলাকায় সরিফ সিএনজি লিমিটেড নামের দুটি ফিলিং স্টেশন এবং নবাববাড়ি রোডে দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট পরিচালনা করে আসছিলেন।
এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে ছিলেন তার পাঁচ মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা, মাহবুবা সরিফা সুলতানা, নাদিরা সরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা সরিফা সুলতানা।
দেলওয়ারা বেগম আরও অভিযোগ করেন, শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে জামাই আনোয়ার হোসেন রানা ও মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানাকে ব্যবসা দেখাশোনার মৌখিক অনুমতি দেন। কিন্তু একপর্যায়ে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফাঁকা স্ট্যাম্প, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক চেক ও এফডিআরসহ বিভিন্ন নথিপত্রে তার সই নেন জামাই। এরপর তার নিজের নামীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ টাকাসহ এফডিআর ভাঙিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশি তুলে নেন।
২০১৫ সালের ১ জুন থেকে এই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ তুলে আত্মসাৎ করেছেন মেয়ে-জামাই। এরই বাইরে একই সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার নামীয় ব্যাংক হিসাব থেকে আরও ৫০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। আর তাদের এই কাজে সহায়তা করেছেন সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক কাম ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলাম (৩৮), ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক হাফিজার রহমান (৫০) এবং সুপার মার্কেটের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম (৫০)।
দেলওয়ারা বেগম জানান, জামাই আনোয়ার হোসেন রানা পিস্তল উঁচিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। এরই মাঝে গত ২১ সেপ্টেম্বর বাসার আলমারি-সিন্দুক থেকে নগদ অর্থ, ব্যাংকের চেক, এফডিআর এবং ব্যবসায়িক সকল নথিপত্র নিয়ে চলে যায়।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বরে আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল মরহুম সরিফ উদ্দিনের চার মেয়ে মাহবুবা সরিফা সুলতানা, নাদিরা সরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা সরিফা সুলতানা। তাদের অভিযোগ ছিল অসুস্থ বিধবা মা দেলওয়ারা বেগমকে জিম্মি করে, ভুল বুঝিয়ে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আনোয়ার হোসেন রানা।