প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শাড়ি নিয়ে বিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গমাতা হল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল (শুক্রবার) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে এই মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন।
হল সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-সম্পাদক তানিয়া আক্তার তাপসী বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি ঢাবি সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর হলের বর্তমান সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী এবং সানজিনা ইয়াসমিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনানের অনুসারী।
সম্প্রতি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর তাপসী ওই হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে রাজনীতি না করে এককভাবে তানভীর হাসান সৈকতের রাজনীতি করতে চান। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার অনুসারীদের জন্য বর্তমান হল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে আলাদা শাড়ি দাবি করেন। কিন্তু সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাপসী ছাড়া তার বাকি অনুসারীদের শাড়ি দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলাদাভাবেই অংশগ্রহণ করেন তাপসী ও তার অনুসারীরা। ওই দিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় হলে ফিরে যাওয়ার পর এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, হাতাহাতি এবং মারামারির ঘটনা ঘটে।
হল ছাত্রলীগের সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখি ও সাধারণ সম্পাদক সানজিনা ইয়াসমিন নিজেরাও চড়াও হয়ে মারধর ও হাতাহাতিতে অংশ নেন বলে জানান একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। রাত ৮টার দিকে শুরু হওয়া হাতাহাতি ও সংঘর্ষ চলে ১০টা পর্যন্ত।
এ ঘটনায় উভয় গ্রুপের অন্তত দশ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপসম্পাদক ও হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাইন, প্রশিক্ষণ উপসম্পাদক তানিয়া আক্তার তাপসী, ছাত্রলীগ কর্মী সুলতানা ও সাধারণ শিক্ষার্থী শাহিদা আক্তার। আহতরা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পরে ঘটনাস্থলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নিলুফার পারভীন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। তারা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে বিষয়টির সমাধান করেন। এ ঘটনা তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
মারামারির বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখি বলেন, শাড়ি না পাওয়া কিংবা নতুন গ্রুপ বের করা নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি বরং তাপসী হল ছাত্রলীগের কেউ না। হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাইনের ইন্ধনে হলের নতুন প্রার্থী হয়, আলাদা গ্রুপ বের করে, আমাদের সুনাম ক্ষুন্ন করতে হলের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ গতকাল প্রোগ্রাম শেষে হলে এসে আমাদের মেয়েদের সঙ্গে ঝামেলা শুরু করে। এরপর মেয়েরা আমাকে ফোন দিলে আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক হলে যাই। এ সময় আমার মেয়েদের সামনে রওনক জাহান রাইন এবং তাপসী আমাদের খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেন। এরপর তারা আমাদের গায়ে হাত তোলে। এই ঘটনায় আমাদের সাতজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন গুরুতর আহত হয়ে পপুলার হাসপাতালে ভর্তি।
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাপসীর এক অনুসারী বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা ছিল হল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মুভ করতে হবে। পরের দিন প্রোগ্রামে যাওয়ার সময় তারা বলে বঙ্গমাতা হল থেকে একটাই মিছিল যাবে আর যারা শাড়ি পরে নাই তারা যাবে না। এরপর প্রোগ্রাম থেকে ফিরে হলে ঢোকার সময় আমাদের ওপর হামলা হয়। এরপর হলের ভেতরে থাকা আমাদের মেয়েরা এসে আমাদের প্রটেক্ট করে। তারা কোনো হামলা করে নাই।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটুক তা চাই না। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। গতকাল হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে সুষ্ঠু সমাধান করেছি।
তিনি আরও বলেন, যারা গতকালের ঝামেলার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সবাইকে একজনের রাজনীতি করতে হবে এমন নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ একজন প্রভাব খাটিয়ে বলবে সবাইকে একদিকে রাজনীতি করতে হবে। ছাত্রলীগ এমন রাজনীতি করে না। সবাই শেখ হাসিনার কর্মী।