দেশে করোনাকালীন এই চরম দুঃসময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী ৫১ হাজার শ্রমিকের চাকরিচ্যুত করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু সাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ঐক্যফ্রন্ট নেতৃত্ব বলেন,‘রাষ্ট্রীয় খাতের সবগুলো পাটকল সরকার বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাটকলগুলোয় বর্তমানে স্থায়ী শ্রমিক আছেন ২৪ হাজার ৮৮৬ জন। এছাড়া তালিকাভুক্ত বদলি ও দৈনিকভিত্তিক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। অর্থাৎ ৫১ হাজার কর্মীর পরিবারের অন্তত আড়াই লক্ষ মানুষের জীবনে এক চরম বিপর্যয় তৈরি করা হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, যখন করোনার ভয়ঙ্কর অভিঘাতের ফলে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়া দূরে থাকুক, সরকার বর্তমানে কর্মে নিযুক্ত মানুষকেও কর্মচ্যুত করছে।
পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার কারণ হিসাবে পাট মন্ত্রণালয়ের সচিবের দেয়া বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, পাটকল সচিব বলেছেন,‘গত ৪৮ বছরে সরকারকে এই পাট খাতে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে।’ অথচ এক ওয়াট বিদ্যুৎ না কিনে গত ১০ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ বিরাট কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। পাট খাতে যে লোকসান হয় সেটার জন্য শ্রমিকরা কোনভাবেই দায়ী নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত আর সব খাতের মতো প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণেই এই শিল্পগুলোতে লোকসান হয়। সেই ব্যর্থতার মূল্য আজ দিতে হচ্ছে শ্রমিক ভাইদের।’
এই চাকরিচ্যুতির আগেও দফায় দফায় শ্রমিকদেরকে রাস্তায় নামতে হয়েছে তাদের বকেয়া মজুরি আদায়ের দাবিতে। তথাকথিত ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ রাষ্ট্রটি তার অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করা নাগরিকদের বেতন মাসের পর মাস বাকি রেখেছিল। এখন সেই শ্রমিকদের ওপর নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পাটকলগুলো পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় চলবে। সরকারের অতীত রেকর্ড থেকে এই আশঙ্কা করার খুবই যৌক্তিক কারণ আছে, শেষ পর্যন্ত এই পাটকল এবং এর সব সম্পত্তি সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হবে নামমাত্র মূল্যে। সরকারের এই সিন্ধান্ত দেশের পাটকল শিল্পকে ধ্বংস করে পশ্চিম বাংলার মৃতপ্রায় পাটকল কারখানাগুলো চালু করার নীলনকশারও অংশবিশেষ বলে প্রতীয়মান হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সবকিছু বিবেচনায় সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি করছি। এই সিদ্ধান্ত রদ করার লক্ষ্যে পাটকলগুলোর শ্রমিক ভাইদের যে কোনো কর্মসূচির প্রতি আমরা সংহতি জানাই।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন- ঐক্যফন্টের আহবায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী।