
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের চলমান সংলাপে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সোমবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া নির্বাচনের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ সারা দেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে দলটি। ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন হবে। বুধবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিএনপি বিশ্বাস করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যতিরেকে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোনো নির্বাচন কমিশনই করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন, তার কোনো ক্ষমতা নেই পরিবর্তন করার। সেই কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোনো ইতিবাচক ফল আনতে পারবে না। বিএনপি অর্থহীন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিস্তারিত আলোচনা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যতীত নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়।
তিনি বলেন, বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেছিল। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনি ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার কারণে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পরপর দুটি নির্বাচন কমিশনই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি মনে করে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনই স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে না।
সভায় বিএনপি মহাসচিব খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সদস্যদের অবহিত করেন। এছাড়াও সম্প্রতি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪৫ জনের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজদের দ্রুত উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়। এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফএআই) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সাল বাদ দিয়ে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই হিসাব সামগ্রিক চিত্র বর্ণনা করে বলে মনে করে না বিএনপি। প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সামগ্রিক চিত্র আরও ভয়াবহ। সভা মনে করে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়ে অর্থ পাচার হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ইউএনএইচআরসির গুমসংক্রান্ত ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস’ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক ‘গুম’-এর ঘটনাগুলো উঠে এসেছে। এক দশক ধরে রাজনৈতিক বিরোধী নেতা ও কর্মীদের গুম, নাগরিক আন্দোলনের কর্মী গুম হওয়া বাংলাদেশে একটা ত্রাসের অবস্থার সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বারবার বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধিদল তদন্তের জন্য পাঠাতে চাইলেও সরকার অনুমতি দেয়নি। সভায় তদন্ত কমিটিকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।