বিরোধপূর্ণ নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে চলমান সংঘাত নিরসনে আলোচনার জন্য রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান। রবিবার শুরু হওয়া এই সংঘাত টানা চতুর্থ দিন বুধবারও অব্যাহত রয়েছে। উভয়পক্ষের নিশ্চিত হতাহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। রুশ সংবাদমাধ্যম মস্কো টাইমস এখবর জানিয়েছে।
নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের পুরনো সংঘাত গত ২৭ সেপ্টেম্বর (রবিবার) থেকে নতুন করে আবার শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের সংঘাতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। মঙ্গলবার আর্মেনিয়া অভিযোগ করে তুর্কি বিমান হামলায় তাদের একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশগুলোর একটি সামরিক জোটের সদস্য রাশিয়া। যে জোটে আর্মেনিয়া রয়েছে এবং দেশটিতে একটি রুশ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। অবশ্য আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া, উভয় দেশের কাছেই অস্ত্র সরবরাহ করে মস্কো। আর আজারবাইজানকে সমর্থন করছে তুরস্ক।
যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে রাশিয়া ও তুরস্কের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলোও এতে যুক্ত হতে পারে।
সোমবার রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, আমরা সব পক্ষকে বিশেষ করে মিত্র দেশ তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যুদ্ধবিরতি ও সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে সম্ভাব্য সব কিছু করার জন্য।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পশিনিয়ান বুধবার বলেছেন, রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আজারবাইজানের সঙ্গে আলোচনা যথার্থ হবে না। পশিনিয়ান রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে বলেন, ‘তুমুল লড়াইয়ের এই সময়ে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্মেলনের কথা বলা একেবারে অযথার্থ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতি প্রয়োজন।’
এর আগে মঙ্গলবার আজারবাইজানি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও রাশিয়ার মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাশিয়ান টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন কারাবাখ তাদের ভূখণ্ড। তাহলে আমরা কোন ধরনের সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করব?
সংঘাতের চতুর্থ দিন উভয় পক্ষই ব্যাপক হতাহতের দাবি করেছে। তবে তৃতীয় পক্ষ বা স্বতন্ত্রভাবে কোনও পক্ষের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত হলেও ইয়েরেভান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এই সংঘর্ষে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়। পরে ২০১৬ এবং এই বছরের শুরুতেও সংঘাতে জড়ায় দুই পক্ষ।