সাধারণ মানুষের তাজা রক্তে ভেসে যাচ্ছে মিয়ানমারের রাজপথ। গণতন্ত্রের নেশায় বুঁদ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে সামরিক জান্তা। একের পর এক রাজপথে লুটিয়ে পড়ছে নিথর দেহ। যেমন ক্ষোভের আগুন মানুষের মনে, তেমনি আগুনে জ্বলছে মিয়ানমার। চীনের অর্থায়নে পরিচালিত কমপক্ষে ৫টি কারখানায় কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর আগুনের লেলিহান শিখা উঠে গেছে আকাশে। এরপর রোববার সামরিক জান্তার গুলিতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৯ জন। এ নিয়ে সেখানে এ পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো কমপক্ষে ১২৬। পুরো মিয়ানমারে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত সেনাবাহিনী এবং সাধারণ জনতা।
রোববার অবহেলিত ও শিল্প এলাকা হলাইংথায়াতে অভ্যুত্থানবিরোধীদের ওপর সরাসরি গুলি করেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। সেখানে চীনা অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন কারখানায় আগুন দেয়ার পর এমন একশনে যায় নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। এখানেই হত্যা করা হয়েছে ২২ জনকে।
অ্যাসিসট্যান্স এসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলছে, অন্যান্য স্থানে হত্যা করা হয়েছে আরো কমপক্ষে ১৬ বিক্ষোভকারীকে। এর ফলে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সবচেয়ে বেশি রক্তাক্ত দিনের রেকর্ড গড়েছে মিয়ানমার। চীনের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, হলাইংথায়াতে গার্মেন্ট কারখানায় যখন আগুন দেয়া হয় তখন চীনা অনেক স্টাফ আহত হয়েছে। অগ্নিকা-ের মধ্যে আটকা পড়েন অনেকে। তাই চীনা সম্পত্তি এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সমর্থক বলে দেখা হচ্ছে চীনকে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে শিল্প এলাকা থেকে কালো ধোয়া আকাশে উঠে যাওয়ার পরে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা সরাসরি গুলি ছোড়ে। এই এলাকায় মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে মানুষের অবস্থান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন সাংবাদিক বলেছেন, সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। আমার চোখের সামনে মানুষজনকে গুলি করা হচ্ছে। এই দৃশ্য আমি কখনোই ভুলবো না। উল্লেখ্য, হলাইংথায়া এবং ইয়াঙ্গুনের অন্যান্য স্থানে জারি করা হয়েছে সামরিক শাসন। সেনাবাহিনী পরিচালিত মিয়াওয়াদ্দি টেলিভিশন বলেছে, চারটি গার্মেন্ট এবং একটি সার কারখানায় আগুন দেয়ার পর নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা গুলি করেছে। ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়া অগ্নিনির্বাপণ ইঞ্জিনকে বাধা দিয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষ। হলাইংথায়ার মানুষের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে পার্লামেন্টে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের প্রতিনিধিত্বকারী ডক্টর সাসা।
এ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ভয়ানক বলে বর্ণনা করেছে চীনা দূতাবাস। তবে তারা হত্যাকা-ের বিষয়ে কিছু বলেনি। একই সঙ্গে সহিংস সব কর্মকা- বন্ধ করতে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। একই সঙ্গে অপরাধীদেরকে আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনতে বলা হয়েছে। মিয়ানমারে অবস্থানরত চীনা জনগণ ও কোম্পানির জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে কারখানায় আগুন দেয়ার দায় স্বীকার করেনি কোনো গ্রুপই। ওদিকে চীনা দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে নেতিবাচক মন্তব্য সয়লাব। এতে ব্যবহার করা হয়েছে মিয়ানমারের ভাষা। ২৯ হাজারের উপরে মন্তব্যে ব্যবহার করা হয়েছে হাসিমুখের ইমোজি।
উৎসঃ মানবজমিন