চাঁদপুরে যাত্রীর ফেলে যাওয়া ৬১ লাখ টাকা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন এক অটোচালক। রোববার (২১ জুন) সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায় মো. সজীব (১৮) নামের ওই চালক নিজ উদ্যোগে পুলিশ অবহিত করেন এবং টাকাগুলো জমা দেন বলে নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাসিম উদ্দিন।
পুলিশ জানায়, রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বিকাশ এজেন্ট কর্মী মাসুদ হোসেন শহরের ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ৬১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংক থেকে নেমে ব্যাগভর্তি সেই টাকা নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় উঠে শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকায় এসে নামেন তিনি। কিন্তু ভুলে টাকার ব্যাগটি অটোতে ফেলে যান তিনি।
পরে সেখানে অপেক্ষমাণ বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েলের ব্যক্তিগত যানবাহনে উঠে ফরিদ্গঞ্জ এলাকায় নিজের কাজে চলে যান তিনি। প্রায় আধঘণ্টা পর তিনি বুঝতে পারেন যে টাকার ব্যাগ অটোতে ফেলে এসেছেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে জোড় পুকুরপাড় এলাকায় ফিরে তারা অটোচালককে খুঁজতে শুরু করেন। না পেয়ে তারা থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।
পুলিশ এসে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখে যে ওই অটোচালক যাত্রী নেমে যাবার পর প্রায় আধঘণ্টা সেখানে অপেক্ষা করেন। পরে টাকার ব্যাগটি নিজের কাছে নিয়ে সেখান থেকে চলে যান তিনি। এরপর টাকার ব্যাগের সন্ধানে অভিযান শুরু করে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে টাকার সন্ধান চেয়ে পোস্ট দেয়া হয়। পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়।
এদিকে আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও কেউ ব্যাগ নিতে না আসায় অটোচালক সজীব সেখান থেকে পুরানবাজার পুরাতন ফায়ার সার্ভিস এলাকায় তাদের গ্যারেজে গিয়ে গাড়ি রেখে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারী মো. বাদলকে এই বিষয়ে অবহিত করেন। বাদল ফেসবুক পোস্টটি আগেই দেখেছিলেন। সজীবের কাছ থেকে সব শুনে সাথে সাথে সদর থানায় যোগাযোগ করেন তিনি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পুলিশ পুরানবাজার পুরাতন ফায়ার সার্ভিস এলাকায় যাওয়ার পর সজীব টাকার ব্যাগ হস্তান্তর করেন।
অটোচালক সজীব জানান, “টাকাগুলো পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ব্যাগটি ফেরত দিতে ওই স্থানে প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও কেউ না আসায় সরাসরি পুরানবাজার গ্যারেজে চলে যাই এবং পুলিশকে খবর দেয়া ব্যবস্থা করি।”
এ ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ নাসিম উদ্দিন জানান, “সিসিটিভির ফুটেজ দেখেই থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম অটোচালককে খুঁজতে শুরু করে। পরে সন্ধ্যায় খবর পেয়ে শহরের পুরানবাজার হরিসভা রোডের পুরান ফায়ার সার্ভিস এলাকায় অটোরিকশার চালক সজীবের (১৮) কাছ থেকে ৬১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।”
ওসি আরও বলেন, ‘‘ছেলেটি এখনও থানায় আছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তারা ভুলক্রমে টাকা ফেলে রেখে যায়। এরপর টাকার ব্যাগ পেয়ে অটোচালক আধঘণ্টা ওই স্থানে অপেক্ষাও করে। এসব দেখেশুনে মনে হচ্ছে তার মধ্যে কোনও ‘গিলটি’ নেই।’’
উৎসঃ নয়া দিগন্ত