অনলাইন ডেস্কঃ অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী ইমরান হুসাইন ইমন। গাজিপুর থেকে আড়ং হেডঅফিস তেজগাঁও আসেন চাকরির জন্য। যোগ্যতায় সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও মুখের সুন্নতি দাড়ি আড়ংয়ে জবের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা পরিস্কার বলে দেন, ‘আড়ংয়ের রুলস হচ্ছে, সেইলম্যান হিসেবে জব করতে হলে আপনাকে ক্লিনসেভ করতে হবে৷’
কিন্তু সুন্নতি দাড়ি ক্লিনসেভ করে জব করার প্রতি মোটেও আগ্রহ নেই ইমরান হুসাইন ইমনের। অতঃপর তিনি বের হয়ে পড়েন অফিস থেকে। বাড়ি ফেরার আগে তেজগাঁও অফিসের ঠিক অপজিটে রাস্তায় দাড়িয়ে একটি ভিডিও বার্তায় এমন আচরণ আর নিয়মের জন্য হতাশা প্রকাশ করেন।
ভাইরাল ভিডিওতে তিনি বলেন- আপনারা তো জানেন আলহামদুলিল্লাহ রমজন আসতেছে। আর রমজান উপলক্ষে প্রতিটা ক্লোথিং ব্রাণ্ডের এবং অন্যান্য ব্রাণ্ডগুলাতে সেলম্যান নিয়োগ করা হয়। আমি এক সপ্তাহ আগে বিভিন্ন জায়গায় এপ্লাই করেছিলাম। ফ্যামেলিকে সাপোর্ট করা বা বসে না থাকা এসব উদ্দেশ্যে। অনেকগুলো জায়গায় এপ্লাই করেছি। একটা সিভির পিছনে আমার অনেক সময় খরচ হয়েছিল। ফাইনালি আমি আড়ংয়ে ড্রপ করেছিলাম।
ড্রপ করার পর কোথা থেকে কল আসেনি। আলহামদুলিল্লাহ আড়ং থেকে কল এসেছে এবং ইন্টারভিউর জন্য আজ (শুক্রবার ১২মার্চ) আমাকে ডাকা হয়েছে। আমি গাজিপুর থেকে এখানে এসেছি। আসার পর আমাকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হলে ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত হলাম। তারা আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ তারা আমাকে এমনভাবে কথা বলেছেন যে, আসি পাশ।
আমাকে নিয়ে নিচ্ছেন এরকম কিছু একটা পর্যায়ে যখন আমি চলে আসবো, তখন আমাকে তারা বললেন- ‘আপনি মাস্কটা খুলেন’, এখানে সবাই মাস্ক পড়া ছিলো। যারাই যাচ্ছে সবাই মাস্ক পড়েই যাচ্ছে। মাক্স খোলার পর তারা আমাকে বললেন – ‘আমরা দুঃখিত’। আমি বললাম- ভাইয়া সমস্যা কী!? মানে কি হয়েছে !? তারা বললেন- আমরা আপনাকে কনফার্ম করতে পারছি না। জিজ্ঞেস করলাম- কেন ভাইয়া!? তারা বললেন- কনফার্ম করতে পারবো এমনটা বলছি না। তবে আপনি যদি সেভ করতে পারেন, তাহলে আপনার জবটা কনফার্ম করবো ইনশাআল্লাহ। আপনার সবকিছুই ঠিকাছে।
আমি যেহেতু আগ থেকে সেভের সাথে পরিচয় না আর তারা সেভ করার কথা বলেছিলেন, পরিস্কার করে ক্লিন সেভের কথা বলেনি, যাস্ট বলেছিলো সেভ করার কথা। তো আমি আবার বললাম- ভাই বুঝিনি কথা। আরেকটু পরিস্কার করে বলুন।
তারা আমাকে বললেন- ‘আমাদের আড়ংয়ের রুলস হচ্ছে সেইলসম্যান হিসেবে জব করতে হলে আপনাকে মাস্ট ক্লিনসেভ করতে হবে৷’
আমি কথা শুনে এক মিনিটের জন্য হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম, এটা কি বলতেছে দাঁড়ি কাটতে হবে। জব করি বা না করি পরের ব্যাপার। আমি যখন বুঝতে পারলাম, নিজের মাঝে ফিরে এলাম, তখন বললাম- ভাই! আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া যে, আমাকে মুসলমান হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, মুসলিম বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম দিয়েছেন। আমি আপনাদের জব করবো না অসুবিধা নাই।
তারপর আমি চলে আসতে চেয়েছিলাম। তখন আবার বললাম- আমার একটা জব খুব দরকার। আমাকে অন্য কোনোভাবে নেওয়া যায় কিনা? কম্প্রোমাইজ করার কোন সুযোগ আছে কিনা? তারা বললেন- ‘সরি এটি আমাদের আড়ংয়ের রুলস, আপনাকে এটি কাট করতে হবে।’
তারপর আমি খুশি মনে চলে আসছি। ঠিকাছে আমি যাচ্ছি তাহলে। আমি তাদের আরো বলেছি- ভাইয়া আমি তো মুসলমান। আমার জন্য তো দাড়ি রাখতে হবে। তারপর হচ্ছে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসি। সেজন্য একমুষ্টি বা তারচে বেশি ছেড়ে দিতে হবে আমাকে। মুসলমান হিসেবে কখনো এটি সম্ভব না। কিছুদিন আগে যখন ফ্রান্স রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র করেছিলো; আমার মনে হয় আপনারা যারা আড়ংয়ের সাথে যুক্ত আছেন, তারাও হয়তো ফ্রান্সের বিরুধিতা করেছিলেন। কিন্তু আপনাদের জায়গা থেকে আপনারা ঠিক নাই কেন?