বিশেষ ব্যবস্থায় সীমিত আকারে পাসপোর্ট বিতরণ শুরু করেছে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। গত ১৫ মার্চ এক নোটিশে ১৯ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় হাইকমিশন থেকে সরাসরি পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, নির্দেশের পরপরই পাসপোর্ট নিতে প্রবাসীদের ঢল নেমেছে। গত সপ্তাহে বিশেষ ব্যবস্থায় সরাসরি পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি। রোববার (২৭ মার্চ) পাসপোর্ট নিতে আসা প্রবাসীদের ভিড় সামলাতে হিমশিমে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে মালয়েশিয়া সরকারের করোনা বিধিনিষেধ মেনে আগত প্রবাসীদের পাসপোর্ট দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। আরও প্রায় ১৬ শ পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে বলে জানান পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার প্রথম সচিব মিয়া মো. কিয়াম উদ্দিন।
তিনি বলেন, হাইকমিশনারের নির্দেশে বন্ধের দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাসপোর্ট নিতে আসা সাজেদুল ইসলাম, মতিমিয়া, সাইফুল ইসলাম ও জসিম উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আবেদন না করে সরাসরি পাসপোর্ট নিতে এসেছি দূতাবাসে। সকাল ১০টায় রিসিট জমা দেওয়ার পর বেলা ১১টার মধ্যে আমরা পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। দ্রুত পাসপোর্ট হাত পাওয়ায় দায়িত্বরতদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
এদিকে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া রিক্যালিবাসি কর্মসূচি শুরু হয়েছিল অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া। সরকারের দেওয়া অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা লাভের বৈধকরণের নিবন্ধনকৃত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যথাসময়ে পাসপোর্ট না পাওয়ায় অনেকেই বৈধতা লাভে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
ফিঙ্গার প্রিন্টের সময় বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনার গোলাম সরওয়ারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রবাসীরা। গত ২৪ মার্চ প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে দেশটিতে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় করেন হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
এ সময় সাংবাদিকরা হাইকমিশনারকে অনুরোধ করেন, বৈধতা নিতে ফিঙ্গার প্রিন্টের সময় বাড়ানোর জন্য। হাইকমিশনার সাংবাদিকদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সময় বাড়াতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
হাইকমিশনার বলেন, বিদেশে যে কোনো দেশের মিশন পরিচালনা করে নিজ দেশের নাগরিকদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হয়। এর মধ্যে করোনাভাইরাস এসে নানা বিধিনিষেধের ফলে আশানুরূপ কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা সেবা নিশ্চিত করার গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নতুনমাত্রা যোগ করেছি, যা বহুল কাঙিক্ষত ছিল।
বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে যৌক্তিক করণীয় ও তুলনামূলক ভালো সিদ্ধান্ত নিতে ও বাস্তবায়ন করতে সবসময় সমর্থন দিয়েছে। আলাদা পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার হয়েছে। পোস্ট মালয়েশিয়ার মাধ্যমে দূর-দূরান্তে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে গত এক বছরে তিন লাখ নতুন পাসপোর্ট দিয়েছি। পাশাপশি বৈধকরণের সময় বিবেচনায় নিয়ে আমপাং থেকে সরাসরি পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই কর্মীদের কথা বিবেচনা করে পাসপোর্ট সার্ভিস নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, পাসপোর্ট কেন্দ্রকে ঘিরে প্রতারণা ও হয়রানি হচ্ছে না। এরই মধ্যে হাইকমিশনের যারা প্রবাসী কর্মীর সঙ্গে সঠিক আচরণ করতে বা সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের ছাঁটাই করেছি। হাইকমিশনের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যকেউ যেন প্রবাসী কর্মীকে হয়রানি না করে সেদিকে লক্ষ্য আছে। প্রবাসীদের অনুরোধ করবো যেন নিজেদের দায়িত্ব থেকে হাইকমিশনকে সহযোগিতা করেন। একটি সঠিক পরামর্শ অনেক বেশি উপকারী।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদিন কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী পরিষেবা বিভাগ স্যাটেলাইট সেন্টার উদ্বোধনকালে বলেন, ‘রিক্যালেবাসি তিনাগা কিরজা কর্মসূচি’তে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮৮ জন অবৈধ অভিবাসী কর্মী নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। দেশের প্রয়োজনীয় শ্রমের মাত্র ২০-৩০ শতাংশ পূরণ হলেও বাকি রইলো ৭০ শতাংশ।
উৎসঃ জাগো নিউজ